নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে

আমি নিজে কত বেশি পরিকল্পণা করে উদ্যোগ নিয়েছি তা আমি নিজেও জানি না। অনেক্ উদ্যোগ মরেছে। বেশিভাগ মরেছে জন্মানোর আগে। আরো কিছু উদ্যোগ মাঠে নামার আগে। অল্প কয়েকটা উদ্যোগ দেখতে পেয়েছি পৃথিবীর মুখ। সেগুলোর কিছু সভাগ্যবান, এখনো বর্তমান আছে। মৃত উদ্যোগ থেকে কখনো বা নতুন উদ্যোগ জন্ম নিয়েছে। কিছু প্রোজেক্ট তার দিক হারিয়ে অন্য প্রোজেক্টে রূপ নিয়েছে। যে উদ্যোগে বেশি আবেগ আর দ্রুত এগিয়েছি, সেটা দ্রুত মরেছে।

এখনো উদ্যোগ নেই। নতুন কিছু করার সময় এখনো শেষ হয় নি- এটা ভাবি।

start-up

Picture Source

কোন উদ্যোগকে বাস্তবতার মুখ দেখাতে হলে বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। “বাস্তবতা” বলেছি, “সফলতা” না। সফলতা অনেক পরের জিনিস। আমি এখন নতুন কোন কাজে হাত দিতে গেলে যেটা করিঃ

যাচাই বাছাই করা ও সিদ্ধান্তঃ

উদ্যোগকে যাচাই বাছাই করি একটু সময় নিয়ে। এই সময়টা ভাববার সময়। মাথা খাটানোর সময়। ধরা যাক আমি “একটা বাগান করবো” বা একটা “ওয়েবসাইট বানাবো” এরূপ উদ্যোগের বেপারে বেশি দূর ভাবনা নয়। করবো কিনা সেটা সিদ্ধান্তের জন্য ভাবনা।

শিক্ষা গ্রহণ

এর পরের কাজটি পড়াশোনা। শুধুই স্টাডি। যারা একই রকম কাজ করেছে তাদের কাছে পেলে আলাপ করে জ্ঞান নেওয়া যায়। তারা দূরে থাকলে তাদের সাথে দেখা করা যেতে পারে। ওয়েবে সার্চ করা যেতে পারে। যখন বুঝা যাবে পর্যাপ্ত স্টাডি হয়ে গেছে তখন শুরু করতে হবে।

ডামী প্রোজেক্ট করা

প্রথমে বড় ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে শুরু না করে, ডামী আকারে করা যেতে পারে। ধরা যাক আপনি একটি “নার্সারী করবেন”। এখন জায়গা ও লোকবল নিয়ে না নেমে তিন মাসের ডামী প্রজেক্ট হিসেবে নিজে কাজ করতে পারেন। বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ ও বেলকুনীতে ছোট আকারের নার্সারী বানিয়ে ফেলুন। দেখতে পাবেন অনেক রকম সমস্যা প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়িয়েছে। হতে পারে-পর্যাপ্ত উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে না, বা পানি নিস্কাসনে সমস্যা- ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে আপনার নিজের একটা ট্রেনিং হয়ে গেলে। প্রোজেক্ট এখানেই ফেল হলে অন্ততঃ ইনভেস্ট লস হবে না। চাইলেন, একটা বড় মাপের সোস্যাল নেটওয়ার্ক বা পত্রিকার সাইট বানাবেন। প্রথমে নিজে কিছু স্ক্রিপ্ট লিখুন। একটা অবস্থা দাড় করান। নিজে কোড না পারলে ড্রয়িং করুন অন্ততঃ। অনেক প্রোজেক্ট আছে যেখানে এরূপ স্টাডি করার সুযোগ নাই। সে ক্ষেত্রে আরো ধীরে এগোতে হবে। অনেক দিনের জমানো সঞ্চয় ভুল প্রোজেক্টের উদ্যোগে নষ্ট না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ছোট থেকে বড় করাঃ

কাজটি যদি এমন হয় যা ছোট থেকে বড় করা যাবে তাহলে তাই করুন। ছোট আকার থেকে লভ্যাংশ অর্জনের মাধ্যমে মনোবল তৈরী হলে ধীরে ধীরে বড় করে তুলুন। একটা ধারাবাহিকতা দরকার আছে।

ধারাবাহিক পরিকল্পনাঃ

ধারাবাহিক একটা পরিকল্পনা করা যেতে পারে। মাস বা সপ্তাহে কতটুকু আগাবেন। গুগল স্প্রেডশীট বানিয়ে আমি বেশ কিছু প্রোজেক্টের পরিকল্পনা ও বাস্তবতা হিসার রেখেছিলাম। সময়ে সময়ে পরিকল্পনারও পরিবর্তন হতে পারে।

পার্টনারঃ

নিজে মালিকানায় থেকে কর্মী নিয়োগ করে কাজ করলে মতোবিরোধ হয় না। নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রোজেক্ট চালানো যায়। তবে পার্টনার থাকলে নিজের অনুপস্থিত সময়ে দেখভাল করতে সুবিধা হয়। অনেকে নিজে অনেকদূর এগিয়ে ইনভেস্টমেন্টএর জন্য পার্টনার নিয়ে থাকে এবং বড় কিছু করা সম্ভব হয়।

মনোযোগ কমিয়ে দেওয়াঃ

মানুষের আগ্রহ এক দিকে থাকে না। এটাই নিয়ম। যতদিন পর্যন্ত প্রোজেক্ট থেকে আশানুরুপ আয় না হচ্ছে তার আগে মনোযোগ কমিয়ে দেওয়া মানে প্রোজেক্ট বাতিল করা। আয় এমন একটা পর্যায়ে নিতে হবে যাতে এটি সয়ংক্রিয়ভাবে চলতে থাকে। তখন মন অন্যদিকে ঘুরালেও এটা চলতে থাকবে। লোক নিয়োগ করে ট্রেইনিং দিয়ে তার হাতে ছাড়ার মত উপযুক্ত সময়ে মনোযোগ কমানো ভাল।

পরিবর্তনঃ

পরিকল্পনার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন বা নতুন কিছু সংযোজন হতে পারে। সেটাকে স্বাগতম জানাতে পারেন। আর আগে থেকে প্রস্তুত থাকও জরুরী। অনেক প্রতিষ্ঠান সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে না পেরে পিছিয়ে গেছে। অনেকে অনেক এগিয়েছে পরিবর্তিত হয়ে। আবার মূলধারার বেশি বাইরে এসেও শেষ হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

নতুন প্রোজেক্টঃ

নতুন আরেকটা প্রোজেক্ট এসে পরতে পারে এই প্রোজেক্টের অংশ হয়ে। এবেপারে বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করাউচিৎ।

গুটিয়ে ফেলাঃ

ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে চায় না কেউ। তবুও এমনও হতে পারে এটি বন্ধ করা দরকার। সঠিক সময়ে বন্ধ করে দিতে না পারলে অনেক বেশি লোকসান গুনতে হতে পারে। আমিও টিউটোহোস্ট বেচে দিয়েছিলাম। খারাপ লেগেছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছে যেমন সাপোর্ট দেওয়া দরকার সেটা সম্ভব হচ্ছে না, লাভ যেমন দরকার সেটাও হচ্ছে না। তবে ব্যবসাটি অনেক আনন্দদায়ক ও শিক্ষামূলক ছিল আমার জন্য।

ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে রিউজেবল উপকারণ কিনার চেষ্টা করা উচিৎ। ব্যবসা বন্ধ করলেও যেগুলো ব্যবহার করা যায়- তেমন পণ্য কেনা। কখনো কখনো ব্যবসার মন্দা হতে পারে। তার জন্য সারভাইভ করা যায় কিনা সেটা ভেবে বাচিয়ে রাখার বা গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বাস্তবতার সাথে মিল রেখে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বললাম। আপনার পরিস্থিতি অনুসারেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

3 Comments

Add Yours →

মনটা বিসন্ন হলে আমি হাটি। একা কোন পরিচিত রাস্তায় যেখানে অনেকবার গাড়ী চড়ে গিয়েছি, সেই রাস্তায় একা হাটি। ক্লান্ত হয়ে কোন এক রেস্তোরায় বা চা-র দোকানে কিছু খাই। এভাবে হাটতে আমার ভাল লাগে। ভাবনাগুলো আর নতুন অনেক উদ্যোগ আমার হাটার মাধ্যমে হয়েছে।