মিশুক

কাজের ঝামেলায়, ইন্টারনেটে বসে বেশি সময় দেওয়াতে বা অনেক কারনেই আমাদের যারা নিচু পদের অনেকের সাথে ভালভাবে মিশুক হয়ে ওঠা হয় না। বাড়ির বা অফিসের সিকিউরিটি বা রাস্তার পাসে প্রতিদিন যে চাচা সব্জি বেচতে বসে তার সাথে সখ্যতা হয়েছে খুব কম। হয়তো বা কাজের প্রয়োজনে জিজ্ঞেস করা হয়েছে কিছু।

আমরা যারা বয়সে ছোট অথচ বড় কোন পদে বসে গিয়েছি। যারা বৃদ্ধ অথচ পদের দিক থেকে ছোট তাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু কম না, তারা কিন্তু জীবন যুদ্ধে অনে কিছুই দেখেছেন।

যারা কম শিক্ষিত হওয়ার কারনে পদমর্যাদা ছোট পদে আছেন প্রত্যেকের রয়েছে জীবন দর্শন যা থেকে শিখার আছে অনেক কিছুই।

চার পাসের লোকজনের সাথে মিশলে দেখবেন জীবনটা আরেকটু বেশি সুখের হবে।

বাংলাদেশে অনেক বিদেশিদের দেখেছি- পিয়ন, দারোয়ান, ড্রাইভারদের সাথে দাড়িয়ে চা খাচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে, কথা বলছে। ওরা ভাঙ্গা ইংরেজী মিশিয়ে বাঙালীরা কথা বললেও আন্তরিকতা বা সম্মানের কমতি নেই। এই যে আড্ডা দেওয়া- এটা তার মনে প্রসান্তিই বয়ে আনে। বাঙালী বসেরা কখনো এটা করবে না, পাছে তাদের সম্মানের ঘাটতি হয়ে যায়- পাছে তাকে ভয় না পায়, পাছে কেউ তাকে নিচুশ্রেণী ভাবে।

রিকসায় ওঠে রিকসাওয়ালা চাচার সাথে গল্প জুরে দিলে আপনি সমাজের অনেক কিছুই জানতে পারবেন। রাজনীতি ও সমাজের যে সমস্যাগুলো আপনার চোখে পড়ে না তা তাদের চোখে পড়ে।

ঢাকার শহরের পথশিশুদের সাথে সময় কাটানো যেতে পারে। ওদের মধ্যে রয়েছে আপনার ও আপনার শিশুর জন্য শিক্ষার উৎকৃষ্ট সব উপাদান।

adda

মিশুক হলে একটা দারুন উপকার আছে। নিজের ক্ষুদ্রতার জন্য যে আক্ষেপ সেটা উদাও হয়ে যেতে পারে। আত্ন প্রসান্তির জন্য এটা একটা টনিক হবে।

আরেকটা উপকার অহংকারমুক্ত থাকা।

আপনি কম আয়ের লোকদের সাথে তাদের বন্ধু হয়ে মিশে গেলে নিজের মধ্যের অহমবোধটা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

এ বেপারে তাহের ভাইয়ের লেখাটা চমৎকারঃ

অহংকার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে ১৫ টি পথ অনুসরণ করার চেষ্টা প্রতিনিয়ত ই করে যাচ্ছি… দেখুন নিচের পথ গুলো কারো কাজে লাগবে আশা করা যায়, ইনশাআল্লাহ
———————————————————————-
.
১। আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানত্ব সম্পর্কে শুধু মৌখিক ভাবে নয়, অন্তরে বিশ্বাস রাখা।
২। আমাকে আল্লাহ কেন সৃষ্টি করলেন সেই উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি
৩। আল্লাহ্‌’র কাছে নিজেকে সম্পুর্ণরুপে সমর্পণ করা
৪। অতীত গুনাহ’র কথা চিন্তা করে নিজেকে গুনাহগার ভাবা
৫। মৃত্যু খেয়াল, কবরের আজাব ও জবাবদিহিতার ভীতি দিলে দিলে জারি রাখা
৬। আমি তুচ্ছ ও নগণ্য ” সেও ত অন্তত আমার চেয়ে উত্তম”
৭। বিনয়ী হোণ, কঠিন ও রুঢ় স্বভাব বিলীন করতে চেষ্টা
৮। নিজের সৎ কর্ম কবুল হচ্ছে কিনা এমন ভীতি অন্তরে ধারণ
৯। ঈমানসহ কবরে যাবো ত অন্যথায় জঙ্গলার প্রানিও আমার চেয়ে উত্তম
১০। দাম্ভিকতা তৈরি করতে পারে এমন অভ্যাস/কাজ পরিত্যাগ, বেছে চলা প্রয়োজনে স্বাভাবিক চাহিদার চেয়েও কম চাহিদা মিটানো
১১। ইয়াতিম ও অসুস্থদের সাথে সময় কাটানো
১২। আল্লাহ্‌’র দরবারে স্বীয় অবস্থা বিবেচনায় শোকর ও সবর করা
১৩। মুহাসাবা বা আত্মবিশ্লেষন এবং গুনাহ থেকে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা যতবার প্রতিজ্ঞা ভাঙুক না কেন!
১৪। গরিব বা অপেক্ষাকৃত অল্প আয়ের মানুষের সাথে নিয়মিত উঠবস ও সম্পর্ক রাখা
১৫। এবং নিরহংকার হওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা

আজকাল আমরা তো বাবা-মায়ের সাথেও তেমন সময় দেই না। যতটা দেই তা শুধু প্রয়োজনী কথা। অপ্রয়োজনে সময় দিতে হবে।

অপ্রয়োজনটাই বড় প্রয়োজন।

আমি নিজে অনেক ইন্ট্রোভার্ট। কম মিশি। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি… মিশুক হতে। আর যে কথাগুলো বললাম সেটা নিজের জন্যই।

Leave a Reply