ছোট ইনভেস্টের ব্যবসা আসলে ব্যবসা না, সার্ভিস। ছোট ব্যবসায়ীরা ইনভেস্ট হারায় এটা না বুঝার কারনে।
১. চাকরী করা অনেক মানুষের মনেই ব্যবসা করার ইচ্ছা এজন্য জন্মে যে সে মনে করে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা আসবে। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের দেখে, তাদের কর্মচারীরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং লাভবান হচ্ছে। তাই এমন অনেক চাকরী করা লোকও সাইড ইনকাম করা হিসেবে একটা দোকান দিয়ে ব্যবসা করে যেতে চায়। অনেকে শুরু করেও।
২. এছাড়াও অনেকের ফিক্সট এসেট থেকে আয় থাকা সত্বেও নিজে বেকারের মতো ঘুরে বেড়াবে? মানুষে ভবঘুরে বলছে? বিয়ে করতে হলে একটা ব্যবসা দেখাতে হবে – তাই ছোট একটা ব্যবসা শুরু করে।
এই দুই ক্যাটাগরীর লোক ব্যবসায় লস করে বেশি। প্রথমোক্ত ব্যক্তি চাকরী করার কারনে সময় দিতে পারে না। অন্যেরা তার ব্যবসাকে ঠিক মতো এগিয়ে নিতে পারে না। পাঁচ টাকা লাভের কাষ্টমারের সন্তোষ্টের জন্য পঞ্চাশ টাকার পরিশ্রম দেওয়ার মানুষিকতা কর্মচারীদের হয় না। যে লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছে- সেই কেবল ভাল সার্ভিস দিতে চেষ্টা করবে।
দ্বিতীয়তঃ যে ব্যক্তির কৃষি খামার থেকে বা ঘর ভাড়া দিয়ে ভালই আয় আছে সে যদি রেষ্টুরেন্ট দেয়। সে কাস্টমার সেটিসফ্যাকশনের জন্য নিবেদিত না হয়, তাহলে ব্যবসা ভাল নাও হতে পারে।
ব্যবসা বন্ধ করার সময় অবিক্রিত পণ্য, ফার্নিচার, দোকান ভাড়া ইত্যাদি মিলে অনেকের ইনভেস্টের বড় অংশই শেষ হয়ে যায়।
ছোট ব্যবসা সবই সার্ভিস অরিয়্যান্টেন্ড, যেমন-
রাস্তার পাসে বসে কলা বিক্রেতাকে দেখেন, ঝাল মুড়ি বিক্রেতাকে দেখেন, ছোলা-বুট বিক্রি করা ছোট ছেলেটার দিতে তাকান। বিকেল থেকে শুরু করে রাত এগারটা পর্যন্ত চটপটি বিক্রেতাকে দেখেন। তারা তাদের কাষ্টমারকে সাপোর্ট দিতে চেষ্টা করে। তাদের ইনভেস্ট সামান্য, আয়ও সামান্য।
ভোড় বেলা পাইকারী বাজারে চলে যায় সব্জি চাচা। নিজে পাঁচ, কেজি দশ কেজি বিভিন্ন শব্জি বাছাই করে নিজে বহন করে, কম খরচের ভ্যানে করে বাজারে চলে আসে। তিন হাজার টাকার শব্জি বিক্রি করে নিজেই হাজার টাকার মতো বাসায় নিয়ে যেতে পারে।
মাছের ব্যবসা ও ফলের ব্যবসাও এমন।
তারা তাদের পরিশ্রম দিয়ে আয় করছেন, সামান্য ইনভেস্ট।
পাঁচ-দশ লাখ টাকার ইনভেস্টের ছোট কাপড়ের দোকানের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া, দোকানের এডভান্স এইসব দিয়ে খুব সামান্য টাকাই লাভ বের করতে পারে। এরা না ইনভেস্টমেন্ট না সার্ভিস ওরিয়্যান্টেড। এমন অনেকেরই ব্যবসা থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিৎ। দশ লাখ টাকার ব্যবসা থেকে বছর শেষে সব খরচ বাদ দিয়ে যদি পাঁচ লাখ টাকা না লাভ হয় তাহলে তাকে লাভজনক ফিক্সড এসেট এ ইনভেস্ট করার পরামর্শ দেব।
আবার দেখুন পাইকারী কাপড়েরে মার্কেটে যাদের কয়েক কুটি টাকার উপরে ইনভেস্ট তারা বেশ ভাল আছে। তারা একই দামে স্বর্ণের মতো কাপড় বিক্রি করে। বিক্রি না হলে ফেলে রাখে। সামান্য লাভে বিক্রি করেও অনেক টাকা লাভ হয়।
ট্রেডিং ব্যবসার ক্ষেত্রেও অনেক বেশি ইনভেস্ট দির্ঘ্যদিন ফেলে রেখে আয় করে। সার্ভিস এখান অতটা মূখ্য না। তাদের জন্য মার্কেট রিসার্চ ও মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ।
এতক্ষণের বক্তব্য আমাকে ব্যবসা বিরোধী মনে হতে পারে। না। আর্থিক লাভ ছাড়াও আপনি ব্যবসা করতে পারেন। ধরুন আপনি বেকার, চাকরী পাচ্ছেনই না, তাই কিছু না করার চেয়ে কিছু একটায় লেগে থাকা ভাল। ডিপ্রেশন কমবে শরীর ও মানুসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।
- কেউ কেউ ব্যবসা শিখার জন্যও লেগে থাকতে পারে। অল্প ইনভেস্টের ক্ষেত্রে এটা ঠিক আছে। সামান্য ইনভেস্টে খরচ বাদে লাভ না হলেও কিছু ব্যবসায় দারুন সব জিনিস শিখা যায়, ভবিষ্যতে এটা আপনাকে উপরে নিয়ে যেতে পারে।
- আইটির ব্যবসায় একজন নতুন নতুন অনেক কিছুই শিখতে পারে। ব্যবসা বন্ধ করে দিলেও সে ভাল চাকরী পেতে পারে।
- কিছু ব্যবসায় ক্লাইন্ট বেজ তৈরী করে, যা তার ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ায় কিন্তু নগদ লাভ দেখা যায় না। স্কাইপি এবং ইউটিউব সবসময়ই লস কোম্পানী ছিল এবং অনেক দামে যথাক্রমে মাইক্রসফট ও গুগলের কাছে বিক্রি হয়। অনেকে নিজের ব্র্যান্ডকে অতিমূল্যায়ন করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তাই অবশ্যই এ বিষয়েও সচেতন হতে হবে।
আরো পড়তে পারেন –
Photo by Markus Winkler from Pexels