যা ইফোর্ট করে না মানুষ তা কিনে কেন?

পণ্য কেনার অনেকগুলো সাইকোলজীক্যাল কারন আছে। এই জিনিসগুলো জেনে আপনি নিজের টাকা অপচয় হওয়া থেকে বাচাতে পারবেন। আবার আপনি নিজে ব্যবসায়ী হলে বিক্রি বাড়াতে পারবেন।

বিষয়টা অনেক বড় হলেও আমার মতো করে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করবো।

১. বার বার দেখা ও আশা করাঃ

আপনার সামর্থের বাইরের কোন পন্য বা জিনিসটা কিনতে কষ্ট হবে বা আপনার উচিৎ না এটা কেনা তারপরেও আপনি সেটা কিনতে চাইবেন। ধরুন আপনার প্রয়োজন গ্রামের বাড়িতে একটা বাসা বানানো এবং সেখানকার জন্য তিন লাখ টাকা সঞ্চয় করা দরকারী। কিন্তু আপনি একটি ফোন দেখলেন যেটার দাম ত্রিশ হাজার টাকা, আপনার পনের হাজার টাকার ফোন আছে, তার পরেও আপনি সেই ফোনটি কিনে ফেলতে পারেন।

মানুষ যে পণ্যটি আশা করে তার রিভিউ দেখে, বাজারে গিয়ে সেটি নারা চারা করে দেখে- পরে কেনার আগ্রহ আরো বাড়ে। একসময় কিনে ফেলে।

গুগলে আপনি যে পন্য সার্চ করবেন বা ক্লিক করবেন তা বার বার বিজ্ঞাপনে দেখাবে। আপনার জন্য হাজার কুটি টাকার আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঘুর ঘুর করছে।

২. ডিসকাউন্ট অফারঃ

ধরুন এই মোবাইলটি আপনি কিনলেন না, ভাবলেন আরো কিছু দিন পরে কিনবেন। এই পন্যটি বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীরা ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। প্রথমে এটি কিছুদিন বেশি দামে বাজারে রাখে এবং তারা একটা সময় ডিসকাউন্ট অফার করে বসে। অফারের সময় সীমা তিন দিন।

আপনি দেখলেন ২০% ডিসকাউন্টে তিন দিনের মধ্যে কিনতে পারবেন। আপনি হয়তো ব্যাংকের জমানো টাকা থেকে বা বন্ধু থেকে ধার নিয়ে পণ্যটি কিনে ফেলবেন। আপনার যে আরেকটি মোবাইল অপ্রয়োজনে পরে থাকতে পারে বা পুরতন বলে অনেক কম দামে বিক্রি করতে হবে সেই লসের কথা ভুলে যাবেন।

৩. গ্রুপ ডিসকাউন্ট কিভাবে দেয়ঃ

দুইটি সেবার কাস্টমারকে একজনের সাথে আরেকজনের ব্র্যান্ডিং পরিচয় করে মার্কেটিং করানো হয়। ধরুন, একটা ই-কমার্স অফার করলো বিকাশে কিনলে ১০% ডিসকাউন্ট। এই ইকমার্সের কথা আপনি জানতেন না, বিকাশ এপের মাধ্যমে জানলেন। এখানে এই ইকমার্সের মার্কেটিং করে দিলো বিকাশ। বিকাশ থেকে তাদের কাস্টমারকে এসএমএস করে দিলো যে ১০% ডিসকাউন্ট শুধু মাত্র বিকাশ এপ থেকে কিনলে।

বাজারে কোথাও ১০% কমে এই পন্যটি পাওয়া যায় না, এটা আপনি জানেন। আর তাই এই পন্যটি আপনার দরকার না হলেও কিনে ফেলবেন। এখানে ৯০% টাকাই অপচয় হতে পারে। আপনার নিজের দরকার হলে আসলে অফার দেখারই দরকার ছিল না, বাজারে গিয়ে খুজে কিনতেন।

৪. কিস্তিতে অফার

কিস্তিতে পন্য দেওয়াটাও একটা ফাঁদ। কিস্তুিতে পন্য ক্রেতা মনে করে লাভ হচ্ছে। দেখা যাবে বিস্তিতে পন্য বিক্রেতা সাধারণ দামের চেয়ে বেশি দামে বেঁচছে।

৫. লাভজনক হিসেবে প্রচার

আপনাকে বিজনেজ শিখাতে আসবে আরেক বিজনেসম্যান। কেউ বলবে, মহাসরক হচ্ছে তাই এই জমির দাম অনেক বেড়ে যাবে। প্লট কিনুন। ফ্লাট কিনুন, এটা রিয়্যাল ইনভেস্টমেন্ট। আপনাকে বলবে এই যন্ত্র কিনুন, ব্যবসা করে এত এত লাভ হবে।

লাভের বড় অংশ তাদের পকেটেই চলে যাবে। আর আমি নিশ্চিত বলতে পারবো, আপনি এমন পন্য কখনো একই সময়ে একই দামে বিক্রি করতে পারবেন না।

৬. সাইকোলজিক্যাল্লি ঘায়েল করা

মানুষকে সাইকোলজিক্যাল্লি ঘায়েল করার অনেক মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি আছে। কয়েকটি বলি-

  • নির্দিষ্ট দিনের অফার দিলে মানুষ পণ্যটির দাম হঠাৎ কমেছে বলে কিনে, আসলে এটা তার দরকার ছিল না।
  • একটার সাথে আরেকটা ফ্রি- এরকম অফার মানুষ ভালবাসে।
  • আপনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানী কোন রেস্টুরেন্টের ডিনারে ৫০% ছাড় দিতে পারে। আপনার আসলে এই ডিনার দরকার ছিল না। বাড়তি টাকা খরচ করানো হলো।
  • ক্রেডিট কার্ড বা ই-কমার্সে আপনার পয়েন্ট যোগ হচ্ছে। নির্দিষ্ট পয়েন্ট হলে কিছু পাবেন- এভাবে আপনার টাকা অপ্রয়োজনে সেখান থেকেই খরচ করবেন।
  • গবেষণায় দেখা গেছে কোন পন্যের দাম ১০০০ টাকা না লিখে ৯৯৫ টাকা লিখলে কম টাকা মনে হয়, এবং মানুষ সেটা কিনে।

Image by mohamed Hassan from Pixabay

Leave a Reply