এক.
ছোটবেলায় যেসব অপশিক্ষা পেয়েছি তার মধ্যে একটা হচ্ছে ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যা’। একজন মানুষ নিজেকে সমস্যা হিসেবে দেখলে সে কিভাবে নিজের উন্নতি করবে? প্রথমেই তো নেগেটিভিটি চলে আসে। তার বাবা মা তাকে জন্ম দিয়ে ভুল করেছে- এমন মেসেজ ছোটবেলায় পায়। সে পৃথিবীতে না আসলে পৃথিবী আরো সুন্দর হতো- কত বড় খারাপ কথা।
বরং সে যদি শুনতো, আল্লাহ তাকে পাঠিয়েছে পৃথিবীতে আরও সুন্দর করতে, তাহলে তার মধ্যে হীনমন্যতা জন্ম নিতে পারত না।
মহাসমুদ্রে তুমি একটি বিন্দু নও, একটি বিন্দুতে তুমি মহাসমুদ্র। (-রুমি) এমন কথা কোন পাঠ্যবইয়ে পড়ি নাই।
দুই.
বাংলাদেশ শিল্প উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার পথে। সম্ভবতঃ এদেশের মানুষকে খাদ্য শস্য বিদেশ থেকে আমদানী করেই খেতে হবে। দেখবেন, ধান ও গমের জমিগুলোকে পুকুর, শব্জি ক্ষেত, ফলবাগান ও বনায়ন করে ফেলতে হবে।
এটা এমনিতেই হতো। সরকার চালের দাম কমিয়ে রাখার জন্য যে পরিমান চাল আমদানী করছে, তাতে ধান ও গমের চাষ আরো দ্রুত কমে যাবে।
হয়তোবা, দেশ উন্নত হওয়ার সাথে সাথে মানুষ বাংলো টাইপের সুন্দর ও বড় বড় বাড়ি বানাতে থাকবে। সেখানে সৌখিন প্রানী পালবে ও গাছ লাগাবে। করোনা পরিস্থিতির কারনে এটা দ্রুত করবে।আমাদের কাছে ফসল বিক্রির জন্য মায়ানমার ও ভারত দাড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের কৃষিতে বিদেশি ফল যেমন, মাল্টা, আঙ্গুর, খেজুর, স্ট্রবেরী, তীন ফল, ড্রাগণফল ইত্যাদি দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে চাষাবাদে বেশ পরিবর্তন হয়তো দেখবে আগামী প্রজন্ম।
তিন.
বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ৪০ কুটি হলে এই দেশকে এখনই উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে পেতেন।
প্রশ্ন করতে পারেন কিভাবে?এই দেশে বড় কোন খনিজ সম্পদ নাই। যা তোলা হচ্ছে তার অপারেটিং কস্ট দামের চেয়ে বেশি। তাহলে আমরা উন্নত হচ্ছি কিভাবে?
আমরা উন্নত হচ্ছি-১. বিদেশি র্যামিট্যান্স ২. গার্মেন্স এক্সোপোর্ট ৩. (নব্বই দশক পর্যন্ত) কৃষি ও জুটগুডস। জনসংখ্যা দ্বিগুণ হলে চারগুণ বেশি মানুষ বিদেশে চলে যেতো আর টাকা পাঠাতো। গার্মেন্স এক্সপোর্টও আরো বাড়তো। নানান সম্ভাবনা তৈরী হতো যা এখন অজানা।
অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা যদি স্বাধীনতার পর না বাড়তো তাহলেই বড়লোক থাকতাম। কিন্তু না। তাহলে হয়তো মানুষ আরো বেশি দরিদ্র থাকতো। ৬ লাখ কুটি টাকার বাজেট দিতো পারতো না গভর্নমেন্ট।জনসংখ্যা বৃদ্ধি উন্নয়নের সহায়ক। বইয়ে জনসংখ্যার রচনায় ভুল ছিল।
চার.
নগরে বেশি মানুষ বসবাসের সমস্যাকে মানুষ জনসংখ্যার সমস্যা হিসেবে প্রকাশ করে। একসময় বাংলাদেশের সরকারকেও বেশি বাচ্চা নেওয়ার জন্য প্রচার চালাতে হবে।
১৯৬০ সালে বাংলাদেশের ৫% মানুষ শহরে বসবাস করতো। ২০২০ সালে ৩৮% মানুষ শহরে বসবাস করে। তার মানে গ্রামের জনসংখ্যা খুব বেশি বাড়ে নাই। জনসংখ্যা বৃদ্ধি গ্রামের পরিবেশের কোন সমস্যা সৃষ্টি করে নাই। বরং শহরের মানুষ আয় করে গ্রামকে আরো উন্নত করেছে। গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য সেবার মান আগের চেয়ে ভাল হয়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বাড়ায় গ্রামের অনেক মানুষ পাকা বাড়িও বানাতে পারছে। আমার ধারণা নগরায়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, গাজীপুরের বনাঞ্চল।
দুই. এখন পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যা শহরে বসবাস করে। ২০৫০ সালে তিন ভাগের দুইভাগ মানুষ শহরে বসবাস করবে বলে এসেস করা হয়। এখন যারা যে শহরে বসবাস করে সেই সব শহরগুলো একত্র করলে যুক্তরাষ্ট্রের সমান জায়গা হয়। তারমানে বর্তমানে ত্রিশ কুটি মানুষের জায়গায় ৩৫০ কুটি মানুষ বসবাস করছে।
মানুষকে গ্রামে বসবাস করতে বাধ্য না করে চাইল্ড পলিসি করা বোকামী। এই বোকামীর খেসারত দিচ্ছে অনেক দেশ। এক সময় চীনে ওয়ান চাইল্ড পলিসি করে, এখন থ্রি চাইল্ড পলিসিতে এসেছে। যেসব দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে না বা কমছে সেখানে বিদেশীদের দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।
Image by Md Faysal Ahmed from Pixabay