কিছু লোকের দ্রুত গতিতে ধনী হওয়া, উন্নয়ন, দরিদ্রকে দরিদ্র করা এই সব কিছুর সাথে ব্যাংকের সংযোগ আছে। আগের একটা লেখায় বলছি জমি ও বাড়ি ঘর তৈরীতে ব্যাংকের ভূমিকা।
- যে কোন লোকই ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারবে। সুদ পেতে পারবে।
- যে কোন লোক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না। সুদ প্রদান করতে পারবে না।
ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কারা গুরুত্বপূর্ণ?
- ব্যাংকের কাছে তারাই গুরুত্বপূর্ণ যাদের অর্থনৈতিক স্ট্যাবিলিটি আছে। স্থায়ী চাকরী যারা ৫০ হাজারের উপরে বেতন পায় তারা সহজেই বিনা জামানতে ব্যাংক ঋণ নিতে পারে।
- যারা বিদেশে পন্য রপ্তানী করে ভাল এমাউন্ট ভ্যালু এক্সপোর্ট করতে পারে তারা ব্যাংকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারন, ব্যাংকের মাধ্যমেই ইউএস ডলার হিসেবে দেশে টাকা প্রবেশ করে। আর সাধারণতঃ এক্সপোর্ট ইমপোর্টে দুই নম্বর ডাটা দেওয়া যায় না। এলসির বিপরীতে তারা সহজেই টাকা পেতে পারে।
- যাদের ভাল ফিক্সট এসেট আছে তারাও ব্যাংকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। চাইলে জমি মরগেজ দিয়ে ঋণ নেওয়া যায়।
- গরীব যে ব্যক্তির এইসব কিছুই নাই কিন্তু র্যান্ডম কাজ করে, কখনো বেশি আয়, কখনো কম আয় -তারা ব্যাংকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ না। ধরুন, কোন মাছ বিক্রেতা প্রতিদিন ১ থেকে ২ হাজার টাকা লাভ করে। তার কোন জমি নাই। মাসে ৫০ হাজার টাকা লাভ পেলেও তার ব্যবসাটা বড় করার জন্য ব্যাংক ঋণ দিবে না। অন্যদিকে বড় করপোরেটে বা সরকারী চাকরী করা ব্যক্তিকে ঋণ দিবে।
কয়েকটা বাস্তব উদাহরণঃ
১. কোন ব্যাক্তি ১.৫ কুটি টাকা খরচ করে চারতলা একটি বাড়ি বানিয়েছে যা থেকে ১ লাখ টাকা ভাড়া পায়। তার আরেকটা জমি আছে এটাতে সে বিল্ডিং বানিয়ে ভাড়া দিতে চায়। ব্যাংক এসেসমেন্ট করে আগের বাড়িটির দলিলের বিপরীতে নতুন বাড়িটিতে ১.৫ কুটি টাকা ইনভেস্ট করবে। আরেকটি চার তলা বাড়ি তৈরী হয়ে যাবে। দুই বাড়ির ভাড়া থেকে সহজেই ঋণের টাকার লোন একসময় শোধ হয়ে যাবে এবং একটি বাড়ি থেকে দুইটি বাড়ি হবে।
২. কোন এক ব্যক্তি বেসরকারী অফিসে দির্ঘ্যদিন চাকরী করে। বেতন সত্তর হাজার টাকা। তার পরিবারের জন্য একটি ফ্লাট কিনবে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে। ব্যাংক বলল ডাউন পেমেন্ট ১৫ লাখ নিজের পকেট থেকে দিতে। ঐ ব্যক্তি তার জমানো টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা দিলো। ব্যাংক দিলো ২৫ লাখ টাকা। ফ্লাট কেনা হয়ে গেলো। ফ্লাট ভাড়া পেল মাসে ২০ হাজার টাকা। কিস্তি পরিশোধ করা সহজ হলো। EMI Calculator দিয়ে হিসাব করে দেখতে পারেন কত টাকা লাভ দিতো হলো।
মানুষ ভাড়া থাকতে পছন্দ করে না। ঋণ করে হলেও নিজের ফ্লাটে থাকতে চায়। ঋণ করে হলেও নিজের গাড়ীতে চড়তে চায়। শহরের বাড়ি গাড়ীগুলো এভাবেই তৈরী হয়েছে। ব্যাংক এই টাকা পেয়েছে গরীব যে ব্যক্তিরা ডিপিএস করেছে বা ফিক্সট ডিপোজিট করেছে।
৩. এক এক শিল্পপতি প্রতি মাসে ৫০ কুটি টাকার মালামাল উৎপাদন ও এক্সপোর্ট করে। বছরে ৬০০ কুটি টাকা এক্সপোর্ট, ধরি লাভ ২০০ কুটি টাকা। তার ব্যবসা বড় করার জন্য ১০০০ কুটি টাকা দরকার। আরো এক হাজার কুটি টাকা ইনভেস্ট পেলে বছরে একপোর্ট দ্বিগুন হতে পারে। ব্যাংক এখানে ইনভেস্ট করবে।
শিল্পপতিরা অনেকসময়ই ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফিক্সট এসেটে ইনভেস্ট করে। ব্যবসা কখনো খারাপ অবস্থায় পড়তে পারে, দ্রুত দাম বেড়ে যেতে পারে এমন জমি তারা কিনে রাখে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানীর নামে জমির সাইনবোর্ড দেখতে পাবেন। ব্যাংক লোন নেওয়ার পর কিস্তি ঠিক সময় দিতো পারলো কিনা এটাই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর কিছু অডিট করে লাভ হয় না। ঋণ দেওয়ার আগে যত অডিট ফডিট।
৪. ব্যাংক লোন নিলেই যে ধনী হবে তা কিন্তু না। অনেকে সর্বশান্তও হয়। অনেক গরীব মানুষ এলাকার কিস্তি নিয়ে ফার্নিচার কিনে বা বিয়েতে খরচ করে বা খায় দায়। ছোট উদ্যোক্তাদের অনেকেই লস করে। ইকোনমিক জ্ঞানের অভাবেই এটা বেশি হয়।
আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন এখানে তো ধনী হতে দেখলাম, ব্যাংক তো গরীবকে গরীব করে না।
কেউ ধনী হলে তার ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যায়, সে বেশি দামে পন্য কিনতে পারবে- আর তাই আগে আপনি যে ইলিশ মাছটা ৩০০ টাকায় কিনতে পারতেন এখন সেটির দাম ৫০০ টাকা হয়ে যাবে। ধনী ব্যক্তি ৫০০ টাকা দিয়ে কিনে নিবে। তার মানে, এভারেজ ধনী হওয়ার হারের মতো আপনার ইকনোমি উন্নতি না করা মানে আপনি গরীব হচ্ছেন। আপনি মনে করছেন আগের মতোই বেতন পাচ্ছেন, আসলে আপনার বেতন কমছে।
সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি মূলতঃ তিন ভাবে গরীবকে গরীব করে।
এজন্য ইসলামি ইকনোমিতে সুদ শক্তভাবে হারাম।
- ১. এতক্ষণ যেটা বললাম, ধনীরা বিনিয়োগ পায়। তারা ধনী হয় এবং ক্রয় ক্ষমতা বাড়ায় পণ্যমূল্য বাড়ে।
- ২. রাষ্ট্র নিজে প্রতি বছর মূদ্রস্ফিতি করে টাকার ভ্যালু কমায়।
- ৩. গরীবরাই টাকা ব্যাংকে জমার রাখে। তারা যে সুদ পায় তা মূদ্রাস্ফিতি ও পন্য মূল্য বৃদ্ধির তুলনায় খুব কম। স্বর্ণের দাম সুদের চেয়ে দ্রুত বেড়েছে।
ব্যাংকের মটিভেশনঃ
ব্যাংক নিজে মনে করে তারা মহান কাজ করছে। তারা না থাকলে বড় প্রোজেক্ট হতো না এবং বিদেশে এত বেশি এক্সপোর্ট করা যেতো না। এত বেশি মানুষ কাজ পেতো না। হা। এই কথাটা অনেক ক্ষেত্রে সত্য হতে পারে। বড় ইনভেস্ট না থাকায় গরীব রাষ্ট্র হওয়ায় আমাদের দেশে আগে থেকে গাড়ীর কারখানা গড়ে ওঠে নাই। রেজিস্টার, ট্রানজিস্টর বা মাইক্রোপ্রসেসর তৈরীর ফ্যাক্টরী হয় নাই। (সেটা অনেক বড় আলাপ, আলাদা ভাবে বলতে হবে।)
কিন্তু কনভেনশনাল ব্যাংক না থাকা অবস্থায়ও মানুষ ইনভেস্ট করতো।
তবে করোনার সময় যখন একটা একটা প্রোজেক্ট বন্ধ হয়ে যায় তখন অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের ছাটাই করে এবং বেতন বন্ধ করে দেয়।
প্রোজেক্ট ভ্যালু যাতে না কমে এই চিন্তায় অনেকেই যন্ত্র ও মানুষে ইনভেস্ট না করে ফিক্সট এসেটে ইনভেস্ট করে। স্বর্ণের দাম করোনার সময় বেড়ে যায়। অনেকে ব্যবসা বন্ধ করায় অনেক টাকা জমে যায়। এই টাকা দিয়ে বিল্ডিং বানায় এবং করনা কালে লোহার ও সিমেন্টের দাম বেড়ে যায়।