ভবিষ্যতের ভালর জন্য আমরা কত কিছুই না করি।
ফুটবল খেলা বা বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে বাসায় এসে কঠিনতম সাবজেক্ট ইংরেজী রচনা মুখস্ত করছে কত ছাত্র! আহা… ফাইনাল পরীক্ষাটা ভাল না হলে পরের ক্লাসটায় রোল নং পিছিয়ে যাবে। স্যার প্রথমে রোল ডাকে ১ তারপর ফার্স্ট বয় বলে ইয়েস স্যার। এভাবে যত শেষে যায় তত খারাপের পরিমান বাড়তে থাকে। কি হতভাগা শেষের দিকে যাদের নাম ডাকে।
এসএসসিতে ভাল না করলে ভাল কলেজে ভর্তি হওয়া যাবে না। ভাল কলেজে ভাল পড়ালেখা হয়। তারপর ভাল ভার্সিটিতে ভাল বিষয়ে চান্স। ভাল ভার্সিটিতে চান্স পেলে ভাল চাকুরী সহজ। নিশ্চিত সুন্দর ভবিষ্যত।
ভবিষ্যত আবার দুই রকমের। বড় ভবিষ্যত। বড় ভবিষ্যতের জন্য ছোট ছোট ভবিষ্যত। ছোট ছোট ভবিষ্যত আমারদেরকে বড় ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।
কি ভয়ানক ফাঁদ!
সব বর্তমানের নষ্টের মূল এই ভবিষ্যত প্রথা। এই গাইডলাইন। অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা এই গাইড লাইনকে লক্ষ্য রেখেই পড়ালেখা করে।
এখনই ভবিষ্যত।
বাস্তবিক ভবিষ্যত বলে কিছু নাই। তুমি জন্মানোর আগে তোমার বাবা-মা স্বপ্নে দেখেছে- তুমি আসবে। অপেক্ষা করেছে, সুস্থতার সাথে বেচে থাকবে। তুমি আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছো। তাদের কাছে তোমার এ বর্তমানই ভবিষ্যত।
বর্তমানকে ব্যবহার করো।
তুমি শিশু? তুমি কিশোর বা যুবক? কিছু দিন পর হয়তো “শিশু” “কিশোর” বা “যুবক”। তোমাকে বলবে না। তুমি কিশোর হলে তোমার হয়তো ফুটবল খেলতে মন চায়। খেলো। তোমার যদি খেলার চেয়ে কবিতার বই পড়তে ভাল লাগে পড়ো। পড়ার জন্য যদি তুমি নিজে খেলা বাদ দিতে চাও দেও তবে কখনো বলবা না যে পড়ার জন্য খেলা বাদ দিয়ে ভুল করেছিলে। ভাল পড়ালেখা করেও তুমি ভাল চাকরী বা সমাজে উচু স্তরে নাও যেতে পারো। বড় হয়ে যাবে তখন খেলাধুলার সময় না-ও পেতে পারো। এটা মনে রাখবে। ছাত্রজীবনের মতো আদর, ভালবাসা আর সম্মান একসাথে পাবা না। তুমি সম্মানিত।
নিজেকে ব্যবহৃত হতে দিয়ো না।
তোমাকে ভবিষ্যতে লোভ দেখিয়ে ব্যবহার করতে চাইবে-লোকে। তোমার আপনজন। হতে পারে তোমার ভালর জন্য। কারন তারাও ভবিষ্যতের লোভে পড়ে আছে। ভবিষ্যতের ফাঁদে পড়ে বর্তমানকে খোয়াবে না। তুমি হয়তো একই কাজ করবে-তবে বর্তমানের জন্য। তুমি পড়বে-জানার জন্য। সয়ংক্রিয়ভাবে ভবিষ্যতে এটা কাজে লাগবে। তুমি যদি পরীক্ষায় ভাল করার জন্য পড়ো তাহলে অনেক কমই পড়তে হবে। পড়াটা কঠিন মনে হবে। তোমার বন্ধুরা অনেক পড়ে- তারা জানে অনেক, তোমারও জানার কৌতুহল তাই পড়বে। এভাবে পড়লে সহজ মনে হবে। পাসের জন্য আমরা পড়ি। তাই পাসই হয়, শিক্ষিত হয় না বেশিভাগ।
ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে চমৎকারভাবে ভবিষ্যতটাই নষ্ট করে ফেলছি!
তোমাকে প্রথমে বাবা-মা তারপর আত্নিয়রা, সমাজ সব শেষে শিক্ষকরা একটা পথ বলে দিবে। ভাল ভবিষ্যতে যাওয়ার পথ।
বাবা মা তো ভালর জন্যই বলে- তাই না? হা। তারা তোমার ভালর জন্য তোমার ক্ষতি করে ফেলতে পারে।
“Your time is limited, so don’t waste it living someone else’s life.”
― Steve Jobs
উদাহরন দেব?
আমি অনেক অনেক মা-কে দেখেছি। যারা অনেকগুলো সন্তানের “মা” হয়েছেন। অনেক সন্তানের মা হওয়াতে অনেক সময় দারিদ্রতার সাথে লড়তে হয়েছিল। বাল্য বিবাহের কারনে সেই মায়ের পড়ালেখা মেট্রিকের উপরে যেতে পারে নাই। সে এই ভুল তার মেয়েদের জীবনে হতে দিতে চায় না। সে তার মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষিত করে বিয়ে দিতে চায়। মেয়েরা উচ্চ শিক্ষিত হলো। “বিয়ে” অগুরুত্বপূর্ণ এমন আদর্শ মেয়েদের মাথায় ঢুকে গেল। বিয়ে করে সংসারের ঘানী টানার মতো করে মানুষ না করে চাকুরীজীবী বানালো। এবং এমন একটা বয়সে পৌছালো যে ভাল কোন জীবনসঙ্গী যোগার করতে হিমসিম। অনেক মেয়ের শেষ পর্যন্ত বিয়েও হচ্ছে না-এ জন্য যে উপযুক্ত পাত্র পাচ্ছে না। অনেকের “মা” হওয়ার বয়স পার করে বিয়ে করে মাতৃত্বের স্বাদ পর্যন্ত পাচ্ছে না -এমন অনেকের সাথে আমার পরিচয় আছে।
ডাক্তারি মতে যে বয়স মা হওয়ার জন্য উপযুক্ত, সেই বয়সে মেয়েরা ভার্সিটির ছাত্রী থাকে। পড়া শেষ করতে করতে ঝুকিপূর্ণ মাতৃত্বের দিকে বয়স চলে যায়। ৪-৫ বছর চাকুরী করলে মুটামুটি “ক্যারিয়ার” অর্জিত হয়েছে ধরা হয়। সেই বয়সে অনেকের “মা” হওয়ার যোগ্যতা-হারা হয়।
নিজের জীবনের অপ্রাপ্যতাই যারা গুণে গেল, তারা সেই সূত্র তোমার জীবনে এপ্লাই করতে চাইবে। তোমার উপকারের জন্যই, কিন্তু অপকার হয়ে যেতে পারে। তারা তাদের জীবনের প্রাপ্যতাকে গুণে দেখলো না।
এটা একটা মাত্র উদাহরণ এমন অনেক আছে।
আমার মা-বাবা মাঝে মাঝে যখন কোন বিষয়ে আপসোস করে তখন আমি বলি, “আপনারা অনেক কিছু পেয়েছেনও। এই যে আপনার পাঁচ ছেলে মেয়ে- ভাল আছে, কাছে আছে। সবই তো আপনার” তাদের আপসোস আর থাকে না।
কি চমৎকার ঔষধ। তাদের মন ভাল হয়ে যায়। অনেক টাকা পয়সা দিয়েও যা সম্ভব না, সন্তানরা কাছে থেকে “মা” “মা” বলে ডাকলে মায়ের মন কত ভাল হয়!
(চলবে…)
Photo by Tara Winstead from Pexels