আমি-আমরা বাংলাদেশে জন্মেছি বলেই আজ বাংলায় কথা বলি, বাঙালি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেই। এই দেশে জন্মেছি বলে সব সময় গর্ব করি। কবির সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও বলি,
‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি’।কিন্তু আমি যদি বাংলাদেশে না জন্মে আমেরিকায় জন্মাতাম? তাহলেও কি আমি এই দেশকে ভালবাসতাম? না, বাসতাম না। ভালবাসতাম ওই আমেরিকাকেই। ……… পৃথিবীর সকল দেশের মানুষই নিজের দেশকেই সেরা মনে করে আর আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, কারণ ওই দেশে তার জন্ম।
-জোবায়ের
এক.
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সৈণ্যরা কি দেশপ্রেমিক ট্যাগ পাইতে পারে? পাকিরা বলবেঃ অবশ্যই পারে। যেহেতু তারা দুই দেশ এক থাকুক, শক্তিশালী থাকুক- এটা চাইছিল। দুই দেশ এক থাকলে পাকিস্তান নিশ্চই এখনকার চেয়ে ভাল অবস্থায় থাকতে পারতো।
আমরা বাংলার মানুষ যারা যুদ্ধ করছি তারা কি দেশপ্রেমিক? হা। অবশ্যই আমরাও দেশ প্রেমিক। কারন আমরা আমাদের আঞ্চলের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়ে পাকিস্তানের চেয়ে ভাল আছি। আর ওরা আমাদের অর্থনৈতিক শোষণ করতো।
বাংলাদেশের কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে যদি স্বর্ণের খনি পাওয়া যায় এবং তারা যদি তার ন্যায্য হিস্যা না পায়। তারা যদি বাংলাদেশের বাইরে নিজস্ব স্বাধীন রাস্ট্র চায় তাহলে যারা সেটা চায় তারা কি দেশপ্রেমিক? পুলিশ যদি দেশদ্রোহিতার জন্য তাদের গুলি করে তাহলে পুলিশ কি দেশপ্রেমিক? -জটলা লেগে গেল-তাই না?
খ.
মিয়ানমার বা সিরিয়ার বা অণ্যকোন দেশে যখন নির্যাতন বা যুদ্ধ বেধে যায় তখন সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় খোজে। লক্ষ লক্ষ লোকের দায়িত্ব নিতে চায় না পাসের দেশ। মিয়ানমারের এক লাখ লোক চাইলো তারা এই দেশে আশ্রয় নিবে।
আমি চিন্তা করে দেখলাম- এই দেশে তাদের অনুপ্রবেশে মাদক, চোরাচালান, চুরি ডাকাতি বেড়ে যেতে পার। বার্ষিক মাথাপিছু আয় কমে যাবে। এমনিতেই আমরা বেশি মানুষের দেশ। ওদের রাখা যাবে না। একে তো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচারে তারা দেশ ছাড়লো। বর্ডার ক্রোস করে বাংলাদেশের সমুদ্রে প্রবেশ করার সাথে সাথে আমরা দেশপ্রেম দেখিয়ে তাদের গুলি করলাম। হাজার হাজার লোক পানিতে ভাসতে ভাসতে মরলো। এটাই হয়েছ, ভবিষ্যতে এটাই হবে।
আমারা দেশপ্রেমিক থাকবো তবুও।
গ.
আজ থেকে পাঁচ-সাত বছর আগের কথা। ইরাক যুদ্ধসহ বেশ কিছু কারনে বাংলাদেশের মানুষ আমেরিকাকে ঘৃণা করে। আমেরিকার পণ্য বর্জণ করবে- এইসব প্রচার করতো। আমেরিকা বিদ্বেসী ভাব অনেকের মধ্যে। আমি নিজেও আমেরিকা বিদ্বেসী ছিলাম।
দেশপ্রেমিক ছিলাম কিনা! সেই আমেরিকা বিদ্বেসীদের অনেককে ডিভি লটাররীর অনলাইন ফরম পূরণ করে দিয়েছি। এখনো অনেক বাংলাদেশী আছে গ্রীণ কর্ডের জন্য অনেক কিছুই মেনে চলছে। কর্ড পাওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল হবে, ইহাতে কোন সমস্যা নাই। যদিও দেশপ্রেমিক।
কোন বাঙালী যদি গ্রীণকার্ড পায়, তার আমেরিকার গ্রীণ কার্ড পাওয়াকে শ্রদ্ধা জানাই। আমেরিকায় জন্ম না হওয়ায় এবং বাংলায় জন্ম হওয়া বাঙালী হয়েছিল। এখন আমেরিকাকে ভালবাসতে চেষ্টা করুন। তাহলেই প্রকৃত আপনি দেশপ্রেমিক।
(চলবে… … …)
আমি চাই, দেশপ্রেমিক না হতে। আমি সারা পৃথিবীর। দেশের বাইরে যেতে যে ভিসা লাগে, এটা সরকারগুলোর বুজুয়া চরিত্র। সততার আদর্শে যদি দেশের বিরুদ্ধে যেতে হয়, যাব। এই দেশ যদি অন্যকোন দেশকে অবৈধভাবে আক্রোমণ করে বা সাপোর্ট করে তাহলে সেই দেশের মতামতের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান। কোন দেশের অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নিজের দেশের মানুষের সামান্য কষ্ট হলেও অমানবিকতার রোধে সাহায্য করার পক্ষে আমি। আমার দেশের আইন মেনে চলতে বাধ্য থেকে যে কেউ নাগরিকত্ব চাইলে তাকে নাগরিকত্ব দেওয়া পক্ষে আমি।
আমি মনেকরি, এ পর্যন্ত বর্ডার ক্রস করার কারনে যত মানুষকে মারা হয়েছে, তা অবৈধ। তার জন্য সরকার দায়ী। বর্ডার ক্রস করা অপরাধ হওয়া উচিৎ না। মৃত্যু সমতুল্য অপরাধ তো না-ই।
ছবিঃ বর্ডার ক্রস করার জন্য ফেনালীকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে বিএসএফ
বাংলাদেশের বর্ডারে গিয়ে আপনার যদি মনে যদি দুঃখ হয়। আহা ! বর্ডারের ঐপারে যদি যেতে পারতাম! আপনার মধ্যে স্বাধীনতা-প্রিয়তা আছে। আপনি স্বাধীন হতে চান। নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আপনাকে কেউ বন্দি করে রাখার নিয়ম করেছে। পৃথিবীর শাসক শ্রেনী এ জন্য দায়ী, তারা ভাগ করেছে। ছোট করেছে আপনার জায়গা, নাম দিয়েছে স্বাধীনতা।
- আপনি যদি ভিন্নদেশের নাগরিক হতে চান তবে আপনাকে আমি স্বাধীনতাপ্রিয় ব্যক্তি মনে করবো। আপনি একটা ছোট খাচায় বন্দি থাকতে চান নাই।
- আপনি যদি ভিন্নদেশে টাকা উপর্জন করে জন্মভূমিতে তা এনে “বড়লোক” হইতে চান তাহলে আপনি স্বাধীনতাপ্রিয় না, টাকাপ্রিয়।
- আপনি যদি অন্যদেশে গিয়ে নাগরিক হন। এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব না থাকে আর যদি বাঙালীত্বকে প্রচার করেন, বাঙালী বলে গর্ব করেন। আমার কাছে আপনি ভন্ড, সেই দেশের জন্য একটা বেঈমান। যেহেতু আপনি নিজেই আর বাঙালী নাই।
এটা আমার দর্শণ। আপনার সাথে না মিলা স্বাভাবিক।