আমাদের খরচ আমাদের আয়ের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমাদের খরচ কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।
১. নিজের বাড়ি না হওয়া পর্যন্ত বাসা ভাড়া
বাসা ভাড়া টাকা খরচের বড় একটা ফাঁদ। শহরে যতগুলো বিল্ডিং দেখছেন তার সবই ভাড়াটিয়াদের ভাড়ার টাকার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। একটু কম ভাড়ায় বসবাস করে নিজেই মনে রাখুন কত টাকা সেফ করছেন। সেই টাকা জমিয়ে নিজের বাড়িতে বাসা বানাতে পারেন বা এক সময় ফ্লাট বা জমি কিনতে পারেন।
মাসিক আয় হঠাৎ করে কমে গেলে আপনি মুহুর্তেই একটু কম ভাড়ার বাসায় থাকার অভ্যাস করতে পারবেন না। একটু ভিতরের দিকে বসবাস করলে একই রকম বাসা একটু কম খরচে পাওয়া যায়।
১০ বছর*১৫০০০ টাকা=১৮ লাখ টাকা। অল্প কিছু যোগ করলেই একটি ফ্লাট পাওয়া যায়। একটি ভাল মানের ফ্লাটে ৪০/৫০ বছর বসবাস করা যায়।
২. পঞ্জি স্কিম বা এমএলএম বা অনলাইন ইনভেস্ট
পঞ্জি স্কিম সম্পর্কে পরিপূর্ণ একটা লেখা লিখবো। তবে এটা হলো আপনাকে লাভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলা। আপনাকে প্রথম দিকে ভাল লাভ দিবে এবং আরো ইনভেস্ট করতে উৎসাহিত করবে।
অনেক অনলাইন ইনভেস্টমেন্টে আপনি দেখবেন, আপনার একাউন্টে অনেক টাকা দেখাচ্ছে। আসলে এটা একটা ডাটা। আপনি টাকা তুলতে গেলেই তুলতে পারবেন না।
৩. গাড়ী ভাড়াঃ
প্রতিদিন আমাদের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য ৬০০০ স্টেপ হাটা জরুরী। আমাদের কিছু কিছু পথ হাটা উচিৎ। মোবাইল এপসের মাধ্যমে সহজেই আপনার হাটার অভ্যাস হিসেব করতে পারেন। যাতায়াতের ক্ষেত্রে সমার্থবান না হওয়া পর্যন্ত গাড়ী না কেনাই ভাল। বিশেষ করে সবচেয়ে খারাপ লোন হলো গাড়ীর জন্য লোন।
৪. কম দামের পন্য কেনাঃ
কিছু ক্ষেত্রে কম দামের পন্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে। এমন পোষাক যা টেকসই নয় এবং রং উঠে যায় তা অল্প দিনই ব্যবহার করা যায় – কম দামের হলেও কেনা উচিৎ না। একটি পোষাক আপনি কত দিন পড়তে পারবেন তার হিসেব করে দেখুন। অনেক জামা অর্ধেক দাম হলেও তা অল্প কয় দিন পড়লেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। আবার একটু দাম দিয়ে কিনলে বছর পর্যন্ত পড়া যায়।
শীতের ভাল পোষাক চার-পাচঁ শীতও পড়া যায়।
৫. বেশি দামী পন্য কেনাঃ
প্রতিটি পন্যের ক্ষেত্রে সামর্থ না থাকা সত্বেও প্রিমিয়ামটা কেনার অভ্যাস আপনাকে গরীব করবে। আপনি সবসময় আপনার চেয়ে ধনীদের লাইফস্টাইল ফলো করে পণ্য কিনলে ধনী হতে পারবেন না।
আপনি কেনা কাটায় কত টাকা সেভ করতে পারছেন তা মনে মনে হিসাব করে সঞ্চয় এবং ফিক্সট এসেটে ইনভেস্ট করতে পারেন।
৬. পণ্য সম্পর্কে ধারণা না থাকা
গরীবদের টাকা হলে এমন সব পন্য কিনে যেগুলা লং লাস্টিং না। যেমন- ঘরের ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজ, দামী মোবাইল ইত্যাদি। এগুলা মূলতঃ ধনীদের দেখাদেখি কিনে থাকে। কিন্তু ধনীদের লেভেলে সে যায় নাই। গরীবের সমর্থ হলে সাথে সাথেই ধনীদের কালচার ফলো করা শুরু করে। গরীবদের ধনী হওয়ার পথের বাধা এটা।
ধনীরা কিনে জায়গা-জমি, বন্ড, বিল্ডিং বানায় যা দির্ঘ্য দিন টিকে থাকবে। এমন সব পন্য কেনার চেষ্টা করে যার দাম বাড়বে, কমবে না। যতদিন পর্যন্ত লাভজনক পন্য না কেনা যায় ততদিন সঞ্চয় করা ভাল।
৭. অন্যকে আকৃষ্ট করাঃ
প্রতিবেশীকে আকৃষ্ট করতে অনেকে দামী ফার্নিচার কিনে বা দামি পোষাক কিনে। কেউ কেউ ঋণ করে অনুষ্ঠানও করে। অথচ এটা বোকামী ছাড়া কিছু না। নিজের যা আছে তা প্রকাশ করতে না পারাটা হীনমণ্যতা। অহংকার ও হীনমন্যতা একউ মূদ্রার দুই পিঠ।
অন্যের প্রসংশা পাওয়ার চেষ্টা নিজের আর্থিক ও মানুসিক ক্ষতির কারনও হতে পারে। অধিকাংশ মানুষের আত্নহত্যার কারন অন্য মানুষ। নিজেকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভ্যাস থেকে এটার সৃষ্টি।
৮. শিক্ষা ক্ষেত্রেঃ
শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের কমন ভুল ছোট বেলায় বেশি খরচ করে ফেলা। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সামর্থের বাইরে খরচ করে অনেক বাবা মা-ই পরে সন্তানকে উচ্চ শিক্ষার জন্য খরচ করতে পারে না।
অনেকেই পড়ালেখা থেকে বের হয়ে যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে বিদেশে অনেক ধরনের কম খরচের সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা যাচাই করে দেখা যেতে পারে।
৯. খাদ্য, বিদ্যুৎ ও পানির অপচয়ঃ
- বেশি করে ফল ও শাক সব্জি এক সাথে কেনা উচিৎ না যাতে পচে যায়।
- ফ্রিজে রেখে মাছ ও মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল না। মাসিক বাজার না করে মাছ, মাংস এবং শব্জি সাপ্তাহিক বাজার করা ভাল।
- সিজনাল শস্য বেশি কেনা যেতে পারে- যেমন আলু, পেয়াজ, চাল, ডাল বেশি করে কিনলে খরচ বাঁচবে।
- পানি ও বিদ্যুতের খরচটি অল্প অপচয় মনে হলেও এটা বড় অপচয়। পরিবেশের কি পরিমান ক্ষতি করে আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি তা আমাদের চিন্তায় আনা দরকার।
১০. স্বাস্থ্য সচেতন না হওয়া এবং চিকিৎসা খরচ না করা
নিজে স্বাস্থ্য সচেতন থাকলে অনেক ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক আর্টিক্যাল পড়ুন। সচেতন লাইফস্টাইল গ্রহণ করুন। ভাল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে খরচ না করলে দির্ঘমেয়াদী রোগ হয়ে অনেক বেশি খরচও হতে পারে।
স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার কয়েকটি টিপসঃ
- ১. প্রতি দিন কমপক্ষে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমান।
- ২. কমপক্ষে রোদে থাকুন ৩০ মিনিট।
- ৩. শাক সব্জি খান ও ফল খান প্রতিদিন। ফাস্ট ফুড খাবেন না।
- ৪. হাটুন কমপক্ষে ৬০০০ স্টেপস।
- ৫. সম্ভব হলে হার্ড এক্সারসাইজ করুন ১৫ মিনিট।
- ৬. কোন রোগে আক্রান্ত থাকলে লাইফস্টাইল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ওয়েবসাইটের লাইফস্টাইল টিপস সাধারণত সুস্থ্য মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ভাল থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।