প্রথম বেসরকারী চাকরীতে আসাদের ৭টি আর্থিক উপদেশ (Posted medium)

আমার ভুলগুলো থেকেই আমি লিখবো, লেখাটি বেসরকারী চাকরীর ক্ষেত্রে প্রোযোজ্য।

নতুন পৃথিবী

চাকরী পাওয়ার পরের সময়টা আগের সময়টার মতো হবে না। আপনি অনেকের কাছে বড় হয়ে যাবেন। আপনার আয়ের টাকা পরিবার ও অনেকের অংশিদারী শুরু হয়ে যাবে। আপনাকে আগে যারা ঈদে উপহার দিতো তা বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

আল্লাহ আমাদেরকে যে রিজিক দান করে তা অনেকের অংশই আমাদের মাধ্যমে দিয়ে থাকে। এই ধরুন আগে হেটে যেতেন বা পাবলিক বাসে যেতেন, এখন রিকসায় বা সিএনজিতে যেতে মন চাইবে। এই বাড়তি খরচটা যাদের দিবেন এই রিজিক আপনার মাধ্যমে তাদের কাছে যাচ্ছে।

পরিবার ও সমাজে আপনার নিজের অবস্থান ভাল হতে থাকবে এবং দায়িত্বও বাড়তে থাকবে। অল্প করে হলেও বিভিন্ন সেক্টরে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করুন।

টাকা খরচঃ

নিজের টাকা নিজ হাতে খরচ করার চেষ্টা করুন। নিজের বাজার নিজে করা শিখা ভাল। আমি অনেক পরে বাজার করা শিখেছি।

পরিবারের লোকজন দূরে থাকলে তাদের টাকা পাঠাতে হয়। সবচেয়ে ভাল হয় নিজে বাড়িতে গিয়ে বাজার করা। প্রবাসে থাকা অনেকে দিনের পর দিন টাকা পাঠায়, কিন্তু পরিবারের লোকদের সাথে সম্পর্ক ভাল হয় না ও দূরত্ব বেড়ে যায়।

টাকা সঞ্চয়

এখনই সঞ্চয় শুরু করার সময়। প্রাইভেট সেক্টরের চাকরী যে কোন সময় চলে যেতে পারে বা নিজেরও ছেড়ে দিতে হতে পারে। সেই সময়ের ব্যাকআপ হিসেবে কিছু সঞ্চয় দরকার। আমি মনে করি একজনকে তিন ধরনের সঞ্চয় প্রথম চাকরীতেই করা উচিৎ

  • ১. প্রোফিট ফান্ড-দির্ঘ্য মেয়াদী সঞ্চয় ৭% যা চাকরী ছাড়া পর্যন্ত বা কোন সম্পদ কেনার সময় ভাঙানোর টারগেটে করা
  • ২. পরিবারের প্রয়োজনে সঞ্চয়- পরিবারে আপনি যে টাকা পাঠান তা একটু কমিয়ে সেই টাকা পরিবারের জন্যই রেখে দেওয়া।
  • ৩. ফ্লেক্সিবল সঞ্চয়- খরচ বাদে বাকিটা সঞ্চয়।

শিক্ষায় ইনভেস্ট

চাকরীর ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে টাকা ইনভেস্ট না করাই ভাল। ছোট ইনভেস্টররা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। তবে এই সময় নিজের প্রতি ইনভেস্ট করুন। কোন টেকনিক্যাল ট্রেনিং প্রয়োজন হলে ট্রেনিং নেন, এটা আপনার বেতন বাড়াতে সাহায্য করবে। কোন কাজ না জানলে কলিগের সাথে ভাল ব্যবহার করে শিখুন।

সরলমনা থাকুন। নিজে অনেক জানেন এমন ভাব আপনার শিখার প্রতিবন্ধকতা তৈরী করবে, কেউ আপনাকে সাইড দিতে চাইবে না।

চাকরী পরিবর্তন

চাকরী মানে নিজের সময়কে বিক্রি করা। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলুন এবং ভাল বেতনে চাকরী পেলে সেখানে চলে যান। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় চলে যান। জাম্প করার মাঝে বেকার হয়ে পড়তে পারেন, তাই ফান্ড সংগ্রহ করে রাখুন। ধরুন এক জায়গায় আগের চেয়ে দেড়গুন বেতনে চাকরী হলো। নুতন জায়গায় চাকরী করার প্রথম মাসেই চাকরীটা চলে গেল। আরেকটা চাকরী পেতে পেতে আপনার খরচ যোগার করে রাখতে হবে।

দ্বিতীয় চাকরীতে যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার কম্যুনিক্যাশন স্কিল ঠিক করে নিন। মানুষের সাথে কথা বলা ও চলাফেরা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

কুটিপতি হওয়ার প্লানঃ

অল্প বেতন পেলেও আপনি কুটিপতি হতে পারেন। অনেক বেশি বেতন পেলেও ঋণে জরিয়ে যেতে পারেন। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বললেও এখন ছোট একটা হিসাব দেওয়া যায়। ১৫ বছরে ২০ লাখ টাকা সঠিকভাবে সঞ্চয় ও ইনভেস্ট করলে এটা কুটি টাকায় পরিনত হতে পারে। কোন ব্যবসা না করেও।

একটা বেসরকারী চাকরীর আয় ও সঞ্চয়ের ডেমো দিচ্ছি।

১ থেকে ৩ বছর বেতন ২০০০০ টাকা সেভিং ৩০% = ২,১৬,০০০

৪ থেকে ৫ বছর বেতন ৩০০০০ টাকা সেভিং ৪০% = ২,৮৮০০০

৬ থেকে ৮ বছর বেতন ৫০০০০ টাকা সেভিং ৫০% = ৯,০০০০০

৯ থেকে ১৫ বছর বেতন ৬০০০০ টাকা সেভিং ৫০% = ২৫,২০,০০০

—————————————————————————————

৩৯,২৪,০০০ টাকা

এই টাকা সঠিক ভাবে ইনভেস্ট করলে দুই কুটি টাকার বেশি এসেটে পরিনত হতে পারে।

রিটায়ার্ড প্লানঃ

টাকা আপনাকে শান্তি এনে নাও দিতে পারে। তবে টাকা খরচ করে আপনি স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবেন। আপনি এখনই রিটায়ার্ড প্লান করুন। ধরুন, এখন আপনার বয়স ২৫ বছর। ১৫ বছর পরে আপনি চাকরী ছেড়ে দিবেন। তাহলে আপনার বিভিন্ন বছরে বেতন কত হবে এবং সঞ্চয় কত হবে তার প্লান করুন। চাকরী শেষে আপনার সঞ্চয় ও ইনভেস্ট মিলে এসেট কত হতে পারে তার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে দিতে পারেন।