ক্ষমতা ধরে রাখা

আপনি পরিবারের একমাত্র আয় করা ব্যক্তি। পরিবারের সকল ব্যায় আপনি নির্বাহ করেন অথচ আপনি পরিবারে তেমন পাত্তা পান না। অনেক সিদ্ধান্তও আপনাকে ছাড়া হয়ে যায়, আপনাকে শ্রদ্ধাও করে না-বেলও দেয় না। আপনি পরিবারের অনেক কিছুই জানেন না-যা আপনি জানার অধিকার রাখেন। আপনি দুঃখ পান, আপনার দুঃখে আমিও দুঃখিত।

অনেক পুরুষ নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার এরকম পদ্ধতি অনুসরণ করে-

  • টাকা আয় করে।
  • প্রতি মাসে পরিবারের সব ব্যায় ভার স্ত্রী, ছেলে বা ভাই বা অন্য কারো হাতে ছেড়ে দিয়ে আরামে জীবন যাপন করে।
  • আফিসের নানান কাজের চাপ থেকে রক্ষা পেতে, বাড়তি খরচ হতে রক্ষা পেতে ঈদ বা অনুষ্ঠানের খরচও বাজেট ধরে দিয়ে দেয়।
  • মাসিক সঞ্চয় বা ঋণ সে সুন্দরভাবে ম্যানেজ করে। পরিবারের কেউ কেউ দূরে থাকলে যেমন বাবা-মা গ্রামে থাকলে বা সন্তান হোস্টেলে থাকলে তার খরচের টাকা পাঠিয়ে দেয়।

এই পদ্ধতির কারনে পরিবারের অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত হলেও অনেক কিছু থেকে বঞ্চিতও হয়। এমন পুরুষ চিনি, আমি নিজেও এমন ছিলাম যে তার বচ্চার জন্য কিভাবে কোন জামা কাপড় কিনতে হবে জানেনই না। নিজের পছন্দের কিছু কিনতেও পারেন না-এমন কি স্ত্রী বা পরিবারের জন্য কোন গিফট কিনতে হিমসিম খান- বাজেটে প্যাচ লেগে যায়। তবে এই প্যাচ ছুটাতে যে ভাল পারে তাকে দিয়ে ঠিকই কাজ করিয়ে নিচ্ছেন-ফলফল আপনার গুরুত্ব পরিবারে কমে গেছে।

আপনি ঝামেলা থেকে বেচে গিয়ে জীবন যাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছুই শিখতে পারেন নাই। চাকরী ও কাজে আপনি যতই গুরুত্বপূর্ণ থাকেন আপনি পরিবারের ব্যাংক বা টাকার উৎস ছাড়া কিছুই না। যখন আপনার চাকরী জীবন চলে যাবে তখন আপনি আরো দূরে চলে যাবেন-যদি পরিবারের সবাই সুশিক্ষা না পায়। আপনার অবদান অস্বীকার করার কয়েকটা পদ্ধতি তা অবলম্বন করতে পারে-

  • জন্ম দিছেন-আপনি তো এটা করবেনই। (বাবা হয়ে থাকলে সন্তান বলতে পারে)
  • আপনি তো দুনিয়ার কিছুই বুঝেন না।
  • ওহ! সে তো নিজে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না- তাকে জিজ্ঞাসা করে কি লাভ।

এক. নিজেকে গুরুত্বহীন দেখে কেউ কেউ আবার অভিমানী হয়ে যায়। কোন কিছু মনে মনে চায় এবং না পেয়ে কষ্ট পায়। এটা আভিমানের একটা প্রকাশ, এটা আমি পছন্দ করি না। উদাহরণ স্বরূপ- পরিবারের বাবার হালকা জ্বর হয়েছে-সে মনে মনে চাইছে সবাই একটু খোজ খবর নেক বা ডাক্তার দেখাক। কেউ তেমন তোয়াক্কা করছে না। ধীরে ধীরে সে নিজের অবস্থান আলাদা করে ফেলে – অনেক প্রয়োজনও বলা হয়ে ওঠে না।

দুই. আরেকটা প্রকাশ চিল্লাপাল্লা করে অধীকার আদায় করার চেষ্টা। বারবার বলা, যে পরিবারের জন্য সে কি কি করেছে। কি কি অবহেলা করা হচ্ছে তা জানান দেওয়া। কিন্তু কেউ তা গুরুত্ব দেয় না।

উপরের দুই অবস্থার একটা পরিনতি হলো নিজেকে আলাদা করে ফেলা- পরিবারের থেকে আলাদা বেশি সময় থাকার চেষ্টা করা, পারলে অন্য বাড়ি বা অন্য কারো বাড়িতে অবস্থান করা। অফিসে অহেতুক বেশি সময় কাটানো।

করনীয় কি হতে পারে?

প্রথম থেকেই পরিবারের আয় ও ব্যায় উভয়টাকেই নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলবো। কিন্তু এত কাজ করা মুসকিল হলে মাঝে মাঝে কাজ ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে।

  • নিজের সম্পদের মালিক নিজে থাকা। সন্তানদের কাউকে আলাদা করে বাড়তি সুবিধা না দেওয়া।
  • ভাল কোন খাবার তাদের দিলে একই সময় নিজেও খাওয়া। খাইয়ে দেওয়া এবং তাদের হাতে খাওয়া।
  • তাদের গিফট দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে গিফট নেওয়া। তারা আয় না করলে তাদের টাকা দিয়ে নিজের জন্য গিফট কেনানো।
  • সন্তানদের ছোট বয়সে ছোট খাটো কোন আয় করার ব্যবস্থা করে দেওয়া। এতে করে আয় করা ব্যক্তির উপর শ্রদ্ধা জন্মাবে।
  • আফিস বা নিজের কোন প্রোজেক্টে পরিবারের সদস্যদের কিছু কিছু কাজ করানো।
  • নিজে বাজার করার চেষ্টা করা, বাজার করা শিখা, নিজের পছন্দের জিনিসটা পরিবারে পরিবেশন। ধরুন আজ আপনার নির্দিষ্ট কোন রেসিপির খাবার খেতে মন চাইছে সেই অনুসারে বাজার করা।
  • কোন সেবা করানো দরকার হলে বলা- যেমন মাথায় তেল দিয়ে দাও বা নখ কেটে দাও এমন আদেশ করা।
  • নিজে ঘরের কিছু কিছু কাজ করা। সবাইকে নিয়ে কোন একদিন ঘর পরিষ্কার করা।
  • কোথাও ভ্রমনের ভ্যানু নিজে ঠিক করা এবং সেখানে সবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়া।
  • কাজের চাপ কমাতে মাঝে মাঝে কাউকে কোন দায়িত্ব দেওয়া এবং সে দায়িত্ব সরিয়ে নিয়ে আরেকজনকে দেওয়া।
  • নিজেকে অগুরুত্বপূর্ণ এবং নিজের অধিকার খর্ব হতে দেখলে সাথে সাথে জানানো বা বুঝানো, দরকার হলে প্রতিবাদ করা।
  • দান করুন। দান করার ক্ষেত্রে কখনো অন্যকে দায়িত্ব দিয়েন না। নিজে কাছে থেকে দান করুন। খাওয়ান। কাপড় কিনে দিন নিজ হাতে, নিজের পছন্দ মতো।

(আরো আপডেট হতে পারে)

Leave a Reply