জমির দাম বাড়ে কমে কিভাবে?

পূজিবাদের বিরোধীতা করতে হলে এ সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হবে।

মানুষের সাইকোলজীর সাথে পূজিবাদের দারুন সম্পর্ক আছে।

ধরুন, কোন একটা গ্রাম এলাকায় জানা গেলে এখানে ফ্যাক্টরী হতে যাচ্ছে। ধরুন কেউ কিছু কাঠামো বানানো শুরু করলো। অবকাঠামোর দাম যদি ৫ কুটি টাকা হয়, আস পাসের জমির দাম বেড়ে যাবে ৫০ কুটি টাকা, মানে দশগুণ। জমি গুলো কয়েকবার কেন বেচা হয় যাবে। এরপর ফ্যাক্টরী হলো না বা যে ফ্যাক্টরী হলো তাতে অল্প লোক কাজ করে।এখান আবার জমির দাম কমতে থাকবে, আগের মতো ধপাস করে কমবে না।

এই টেকনিকটা ব্যবহার করে প্লট বিক্রির ব্যবসায়ীরা।

২০ বছর আগে ঢাকার চার পাসে- নারায়নগঞ্জে, বুড়িগঙ্গার ঐ পারে যে প্লট ব্যবসা শুরু হয়েছিল তার বেশিভাগেই এখনো শহর হয় নাই। যারা প্লট বেচছে তারা বলছিল, শহর হয়ে গুলশান, বনানী হয়ে যাবে অল্প কয় দিনেই। নিজেরা কয়েকটা বিল্ডিং বানাইয়া, রাস্তা বানাইয়া, তারের খাম্বা টানাইয়া বিশাল ব্যবসা করে নিছে।

মানুষের কখনো ভাড়া বাসা ভাল লাগে না। ভাড়াটিয়াদের সমাজে কোন মূল্যায়ন নাই। মসজিত কমিটি বলেন, পঞ্চায়েত বলেন ভাড়াটিয়াদের ডাকে না। এমন কি কবর দিতেও দেয় না অনেক এলাকার কবরাস্থান। এজন্য মানুষ শহরে একটা ফ্লাট বা জমি কিনতে চায়।

১৫ বছর আগে ব্যবসায়ীরাও অনেকে ভেবে বসেছিল, প্লট ব্যবসা দারুন ইফেকটিভ হবে। এমন কি বিদেশি ইনভেস্টরও প্রবেশ করে প্লট ব্যবসায়।

এশিয়ান হাইওয়ে হবে এটা জানার পর অনেক জায়গার দাম ধপাস ধপাস বেড়ে গেছিল। পরে আবার ধুম ধাম কমতে থাকে।

অন্য দিকে অগুছালো অনেক শহর হয়ে গেছে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে, পিউর জায়গা যারা কিনতে পেরেছে তারা লাভবান হয়েছিল। সেখানকার জনসংখ্যা এত দ্রুত বেড়েছিল যে সাজানোর মতো সুযোগই হয় নাই। চিপা চিপা রাস্তা করে মানুষ দালান উঠিয়ে ফেলে। একবার দালান করে ফেললে আপনি রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়তে বলতে পারবেন না।

ঢাকা শহরে মানুষ যে এলাকায় দির্ঘ্যদিন ভাড়া থাকে সেই এলাকাটাকে আপন মনে করে। গাড়ী ভাড়া করে সে দূরে আফিসে যাবে। আসলে ঢাকায় প্রতিবেশীরাই বড় আত্নিয় হয়ে ওঠে। তাই সে একটু দূরে জমি না কিনে কাছে ফ্লাট কিনতে আগ্রহী হয়। অনেক সম্ভাবনাকে সে পায়ে ঠেলে দেয়- এই সাইকোলজিক্যাল কারনে।

দুই.

অনেক গ্রামে উপশহরগুলোতে বড় বড় দালান উঠেছে শ্রমিক ও দরিদ্র শ্রেনীর টাকায়। ফ্যাক্টরী বা স্কুল কলেজ বা ইনস্টিটিউট হওয়ায় ভাড়া বাসার প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত বাসা না থাকায় বেশি টাকা ভাড়া দিতে হয়। জমির মালিককে সহায়তা করতে আসে ব্যাংক। ব্যাংক হিসাব করে দেখলো ভাড়া দিয়েই কিস্তি পরিশোধ হয়ে যাবে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে।

দ্রুত বিল্ডিং উঠে যায়। গরীব মানুষের আয়ের টাকায় উঠে যায় দালান।

ব্যাংক টাকা পেল কোথায়?

এই গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীই ব্যাংকে ডিপিএস ও ফিক্স ডিপোজিট করে। জীবনের নিরাপত্তার জন্য তাদের এই সঞ্চয়ই ভরসা। পাঁচ বা ছয় বছরে দ্বিগুণ লাভের বেশ কিছু প্যাকেজও আছে।

গ্রাম বা উপশহরগুলোতে উপরের লেভেলের লোকেরা থাকতে চায় না। বিশেষ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বড় ব্যবসায়ীরা বড় শহরে বসবাস করে। সেখান থেকে তারা গাড়ী ভাড়া করে ছোট শহরগুলোতে এসে সার্ভিস দিয়ে রাতে আবার বড় শহরে ঘুমাতে যায়।

এটার তিনটা কারন আমি দেখেছি-

  • পরিবারের অন্যরা বড় শহরে চাকরী করে।
  • ছোট শহরে ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাই।
  • ভাল বাসা পাওয়া যায় না।

বুঝা গেল ব্যাংক থেকে ভূমি-মালিক ও শিল্পপতিদের ঋণ নেয়। আর দরিদ্র ও প্রবাসিরা ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। মাস শেষে নিজেদের টাকাকে দরিদ্ররা কাজে লাগাতে পারে না।

এদিকে রাষ্ট্র প্রতিবছর ৫ থেকে ৬% মূদ্রাস্ফিতির মাধ্যমে গরীবের টাকার ভ্যালু কমিয়ে দেয়। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও গরীবরা সামান্য সুদ পেয়েই সন্তুষ্ট থাকে।

এই হলো ক্যাপিটালিজম।

Image by serbuxarev from Pixabay