একা একা ইসলাম শিখা

একজন আলেমের বইয়ে তিনি বর্তমান মুসলিম জাহানের তিনটা সমস্যা উল্লেখ করেছেন। তার একটা সমস্যার  সারমর্ম  – “এখনকার মুসলমান কোন একজন আলেম এর নিকট না গিয়ে ইসলাম শিখতে যায়। বই থেকে বা অন্য কোন ওয়েব সোর্স থেকে। ফলে পরিপূর্ণ ইসলাম শিখা তো হয়ই না বরং কখনো বা ভুল পথে চলে যায়।”

যেহেতু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়া ছেলে আমি। পরিবার থেকে যতটুকু ইসলাম শিখেছি তারপর যে অনেকে আমাকে ইসলামের দাওয়াত দেয় নি তা নয়। কিন্তু কেন এজন কোন আলেমের কাছে যায় না? সে বেপারে আলেমগণের গবেষণা জরুরী।

Picture Credit

প্রথমে বলে নেই শুধু বই থেকে ইসলাম শিখলে বা ওয়েব কনটেন্ট থেকে শিখলে সমস্যা কি?

  • আমি দেখেছি অনেকে ওয়েব থেকে ইসলাম শিখেছেন। তাদের মধ্যে বেশি ভাগ যেটা হতে পারে তা হচ্ছে- অহংকার তৈরী হওয়া। নিজের জানার বেপারে অহংকার করা। আসলে আপনি যত জ্ঞানীই হন না কেন ইসলামে আপানার কোন দাম দেবে না যতক্ষন আপনি না মেনে চলবেন। বিনয়  ও আচার ব্যবহার শিখতে হলে অবশ্যই আপনাকে কারো চলাফেরা দেখেই শিখতে হবে। আপনি যদি বিনয়ী লোকদের সাথে না চলাফেরা করেন তাহলে বুঝবেনই না বিনয়ের কতরকম ব্যবহার আছে।
  • ওয়েব কনটেন্টের একটা সমস্যা হলো এটার কোন ধারাবাহিকতা নাই। আপনার যা ভাল লাগে তার ওয়াজই হয়তো শুনবেন। আপনি সমানভাবে জানতেই পারবেন না। ভারসাম্যের বেপারটা হারিয়েই যেতে পারে।
  • সমালোচনা প্রিয় হওয়ার মতো দোষে দুষিত হচ্ছে অনেকে। যেখানে নিজের সমালোচনা করার কথা ছিল।
  • রাসুল (সঃ) নিজের জীবনে দেখিয়ে দিয়েছেন ইসলামী জীবন। শুধু পবিত্র কোরআন গ্রন্থ হিসেবে পাঠই করা হয় নি। প্রতিটি বিষয়ই বাস্তবতা পরিবর্তন পরিবর্তন করেছে। আর সেটা এত ধারাবাহিক যে ২৩ বছর সময় লেগেছে সম্পূর্ণ হতে।
  • বাংলাদেশের ট্রেডিশনাল ওয়াজ শুনে ইসলাম বুঝা মুশকিল। ইসলাম বুঝতে হলে ইসলামের কমন কনসেপ্ট থেকে শেখা শুরু করতে হবে। আর ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে শিখতে হলে বিভিন্ন ভাষায় রিলায়েবল সোর্স থেকে শিখতে হবে। যেমন, ইসলামওয়েব ডট নেট, ইসলামওয়ে ডট কম এসব সাইটের ব্যাপারে কারও দ্বিমত দেখা যায় না। আরবী ও ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় এখানে প্রচুর কনটেন্ট পাওয়া যায়। যে কেউ চাইলে এরকম সোর্স থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আর কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে অবশ্যই জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে। এটাই যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা যদি না জানো তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করো। এই পয়েন্টটি ইসমাইল জাবিউল্লাহ ভাইয়ের থেকে নেওয়া।

কেনই বা নিজে নিজে শিখতে হচ্ছে?

অধিকাংশ মডারেট মুসলিম ছেলে-মেয়ে নিজ ধর্ম ইসলামের প্রতি অনুরক্ত থাকে। টিভি দেখার সময় আজান হলে টিভিটার সাউন্ড কমিয়ে দেয়। মদ পন করার সময় আজান হচ্ছে, মদ পান বন্ধ রাখছে। নামমাত্র মুসলমান জানে সে ভুল করছে-সে তার ধর্মকে শ্রদ্ধা করে। সে জানে সে পালন করছে না-ভুল করছে।

  • এরকম মুসলমানের সন্তানদের কাছে যারা ধর্মের দাওয়াত দিতে যায় তাদের অধিকাংশই আবার দলে-দলে বিভক্ত। এক দল অন্যদলকে অপছন্দ করে। এক দল অন্য দলকে গালি দেয়। তো ছেলেটা তখন সবাইকে ইগনোর করে। যেহেতু এত বিভেদ। তাই সে নিজে নিজে পড়তে বসে। এটা খারাপ না, মন্দের ভাল। কিন্তু এই পড়তে বসার ক্ষেত্রে কি দিয়ে শুরু করবে? কোথা থেকে কোথায় পড়তে হবে তা সে জানে না।
  • আলেম সমাজ অতটা সামাজিক না বা একজন আধুনিক পড়ালেখার ছেলে যে যে স্তরে যাতায়াত করে সেদিকে তাদের পাওয়া যায় না। অনেক আলেম সাধারনের সাথে খুব একটা দেখাও করে না। অনেকের সাথে দেখা করতে হলে আগে থেকে বলে রাখতে হয়। আমি হলফ করে বলতে পারি-কোন একটি ইসলামী সমস্যায় পড়লে কোথায় বা কার কাছে সে সাহায্য চাইবে তা অনেকে জানে না। অথচ প্রত্যেকের অন্ততঃ একজন আলেমের সাথে পরিচয় থাকা উচিৎ যার সাহায্য সে নিতে পারে।
  • ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাধরদের হাতে চলে যাওয়া বড় সমস্যা তৈরী করছে। মাদ্রাসা বা মসজিদ কমিটিতে সাধারনত এমন লোক নেওয়া হয় যাদের টাকা বা ক্ষমতা আছে। এটার সুবিধা হলো-ফান্ড কালেকশন করে দ্রুত মসজিদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। এই পদ্ধতিটা কিভাবে ক্ষতি করে জানেন? একটা উদাহরন দেই-

মসজিদের টাকা কালেকশনের সময় জৈনেক ব্যাংকার বড় অংকের টাকা দান করলে তা গ্রহণ করা হয়। অনেক সময় বাজার থেকে নির্দিষ্ট পরিমান চাঁদা বা অবৈধ টাকায় মসজিদ-মাদ্রাসা তৈরি করা হয়। আর ইমাম সাহেব সে অবৈধ টাকা গ্রহণের বেপারে বাধা প্রদানের ক্ষমতা রাখেন না। তিনি সুদের বিরুদ্ধে যতই লেকচার দেক-তা কি কাজে লাগবে?

এভাবে সাধারন মানুষ ইমামকে শ্রদ্ধা না করেই তার পেছনে নামাজ পড়ে যায়। তাই ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা ভাল কোন আলেমের নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। না হলে সেটা ধারাবাহিকভাবে ধ্বংশ হবে।

আর ইসলাম না মানা মুসলমানরা কোন আলেমের উপর ভরসা না করতে পেরে হয়তো একা একা ইসলাম শিখতে যাবে। এটা তার জন্য ভাল কিছু বয়ে আনতেও পারে নাও পারে।