আমার হাটাহাটি

আমি কবে থেকে হাটাহাটিকে ভালবেসে ফেলেছি-মনে নেই। হয়তোবা ছোট থেকে হবে। স্কুল কাছেই ছিল, বেশি দূর হাটতে হয় নি। তাই অকারনে এদিক সেদিক হাটতাম। অনেক সময়ই একা। আবার ফিরে আসতাম। অনেক কিশোরদের মধ্যে এটা আমি দেখি। কৌতহলের কারনে তারা হাটে।

20-minute-walk-every-day-

ছবিঃ ফ্লিকার থেকে নেওয়া

এখনকার শহুরে বচ্চাদেরকে বাবা-মা একটা কোথাও বের হতে দিতে চায় না। ক্যাডেট স্কুল বা আবাসিক মাদ্রাসা হলে তো জেলে বন্দি দশা।

যা বলছিলাম। এর পর কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়সে অকারনে হাটার চেয়ে কারনে হাটা হয়েছে বেশি। হয়তো রিকসা ভাড়া নেই তাই হেটেছি- অনেক।

একা হাটার মজাই আলাদা। একা ঘুরেছি ঢাকার অনেক দর্শনীয় যায়গা। শাহবাগের দিকে গেলে চারুকলাটা ঘুরে দেখতাম। এবরো-থেবরো চুলে বসে ছবি আঁকছে কাঠখোট্টা কোন শিল্পি-মনে পরে। চিরিয়াখানা, শহীদ মিনার, কত পার্ক আমি একা হেটে হেটে দেখেছি! কাউকে সাথে নেই নাই। আমি নিজের সাথে নিজে থেকেছি। কথা বলেছি। তখন নব্য যুবক আমি।

মনটা বিসন্ন হলে আমি হাটি। একা কোন পরিচিত রাস্তায় যেখানে অনেকবার গাড়ী চড়ে গিয়েছি, সেই রাস্তায় একা হাটি। ক্লান্ত হয়ে কোন এক রেস্তোরায় বা চা-র দোকানে কিছু খাই। এভাবে হাটতে আমার ভাল লাগে। ভাবনাগুলো আর নতুন অনেক উদ্যোগ আমার হাটার মাধ্যমে হয়েছে।

দূর থেকে গাড়ীতে চড়ে অফিস করা পছন্দ করি না। তাই পাঁচটা চাকরীর সবগুলোই হাটার পথের অফিস ছিল। হেটে হেটে অফিস করি আমি।

গুলশান নিকেতনে চাকরীর সময়টায় বাসা ছিল হাতিরঝিলের পারে, ওয়ানওয়ের বিপরিত এমন একটা দিকে যে আমাকে হাটতেই হবে। ১০ মিনিট হাটতে হতো।

এখনও শ্রীপুর অফিস ১৫ মিনিট হেটে অফিসে আসি। এই হাটাটা প্রয়োজনীয়, তবে মাঝে মাঝে রোদে কষ্ট হলে রিকসা নেই। নিয়মিত রিকসা নেওয়ার ইচ্ছা নেই। নিয়মিত হাটতে চাই। প্রযুক্তি আর উন্নয়নের সবগুলো ব্যবহার করবো না আমি।

ইদানিং হাটার অনেক উপকারিতা আলোচনা হয়। হাটার এপসও আছে। ঢাকার পার্কগুলোতে ভোর বেলাতে অনেকে আসে হাটতে। অনেকে গাড়ী নিয়ে আসে পার্কে, হাটতে আসে। হাটাহাটি করে আবার গাড়ীতে করে বাসায় যায়। ঢাকার রাস্তাগুলো হাটার জন্য উপযুক্ত নয় তাই তাদের গাড়ী নিয়ে আসতে হয়। এটা একটা দরিদ্রতা। অনেকের রোগ হয়েছে তাই হাটে, অনেকে সুস্থ থাকতে হাটে।

  • আমার যখন ব্যাক পেইন হয়েছিল ডাক্তার তখন চেয়ারে বেশি সময় কাজ করতে নিষেধ করেছেন। আমি কিছুক্ষন পর পর বের হয়ে হাটতাম।  যারা বসে বসে বেশি কাজ করে তাদের জন্য হাটার অনেক উপকার।
  • আবার ওজন কমাতেও হাটার বিকল্প নাই। আমি অবশ্য ওজন কমানোর জন্য হাটি না। অনেকে হাটে।
  • হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় হাটলে। একটু বেশি গতিতে হাটলে বেশি ক্যালরী বার্ণ হয়। এগুলো হিসেব করে অবশ্য কখনো দেখি নি।

বান্ধবী বা প্রেমিকা নিয়ে হেটে কখনো মজা পাই নাই। খুব ধীরে মেয়েদের সাথে হাটতে পারি না আমি। এগিয়ে চলে যাই। বেশি এগিয়ে গিয়ে দাড়াই। সমান হলে আবার হাটি। প্যাচ লাগে।

ভাবছি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাটবো। এ অভ্যাসটা আমার সুস্থতার সহায়ক হতে পারে।