কর্ম ও সমাজ

চাকরী আপনাকে চাকর বানাবে।
চাকরমনা বানাবে।
শ্রমিক চাকরীজীবীরা ততটা চাকরমনা না, যতটা বড় চাকরীজীবীরা।
শ্রমিকরা যন্ত্রের মতো স্বাধীন, তবে তারা প্রতিবাদ করতে পারে।
বড় চাকরীজীবীরা সেই ক্ষমতাহারা।
চাকরী হারালে তার মূল্য হঠাৎ শ্রমিকের চেয়ে কমে যাবে।
প্রতিবাদহীন লোককে আমরা ভদ্রলোক বলি।
 .
ছোট ব্যবসায়ীরা ভদ্রলোকদের সম্মান করে, এরাই তাদের কাস্টমার এজন্য।
ছোট ব্যবসায়ীদের সমাজ আর ভদ্রলোকদের সমাজ অনেকটা একই। ছোট ব্যবসায়ীরা অনেক সময় ভদ্রলোকের বেতন সম্পর্কে আন্দাজ করতে চায়। ভদ্রলোক তা জানায় না। ভদ্রলোকের বউ ছোট ব্যবসায়ীর বউয়ের কাছে বেতন একটু বাড়িয়ে বলে।
ছোট ব্যবসায়ীরা সমাজ বা রাজনীতিতে নেতামী বেশি দেখাতে পারে।
দাওয়াত দিলে তারা দামী গিফট দিতে পারে বা মসজিদে বেশি দান করতে পারে। সমাজ কমিটিতে নিজের নাম লেখাতে বা বিচার আচার করতে পারে। সবাইকে আগে সালাম দিতে পারে। কেউ মারা গেলে গোরস্তান পর্যন্ত গিয়ে করব দিয়ে আসতে পারে। (এ সবের মধ্যে কখনো কখনো ব্যবসা-চিন্তা থাকে।)
ভদ্রলোকের সময় কম। তারা সময়করে সব কিছু করে। কিন্তু সময় করে সবাই মরে না, অনুষ্ঠান করে না। এ জন্য তারা বেশ দুঃখ করে।
শিক্ষক আর মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন মাঝা-মাঝি। তারা বেশ-ভুষায় ভদ্রলোকদের মতো থাকলেও অনেক সামাজিক কাজে তারা থাকে।
ভদ্রলোক ও শিক্ষকরা নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে সমাজের অপকর্মের প্রতিবাদ করে না। সময় থাকলেও তাদের সময় থাকবে না। অহেতুক ঝামেলায় জড়ালে তাদের চলবে না। পাছে থাপ্পর খেতে হয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা সহজ না।
বেকার যুবকদের হাতে অফুরন্ত সময়। শিক্ষিত বেকাররা তাদের বাবাদের মতো ভদ্রতার প্রেকটিস করে তাই তারা কমই ঝামেলায় জরায়। ফেসবুক আর ব্লগে তারা সক্রিয়।
 .
সমাজে কোন অপকর্ম হলে সাময়িক উত্তেজনায় তবুও কেউ কেউ আসে। পরে বিচারের দায়িত্ব চলে যায় ছোট ব্যবসায়ী আর অশিক্ষিত যুবকদের হাতে। মসজিদের ইমামদের ডাকলে তারা কোন উছিলায় যেমন-মিলাদ আছে, দাওয়াত আছে বলে বিচারে থাকে না। তাই তাদের বেশি ভাগই ডাকা হয় না।
সমাজে অনেকসময় অবিচার হয়। খারাপকর্ম হয়। ভাগ্য ভাল হলে ছোট ব্যবসায়ী আর এলাকার খারাপছেলেরা অবিচারের সুবিচার করে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের টাকা দিয়ে দমানো হয়।
 .
কম্যুনিষ্ট আর ইসলামী রাজনীতিবিদদের একই রকমের কথা।
দেশে কম্যুনিষ্ট শাসন থাকলে এরকম অত্যাচার হতো না। তারা ফোনে নেতাকে বলে- এরকম অবিচার হইছে। কিছু করা যায় কিনা! নেতা বলে, এটা মানববন্ধন করার মতো কোন ঘটনা না। আপাততঃ সহ্য করো।
মসজিদের হুজুর বলে “সবই আমাদের ঈমানের কমতি।” মাহফিলে ঘটনাটা বর্ণনা করার জন্য তিনি ভাষা তৈরি করে। এটা তার জনপ্রিয়তা বাড়াবে। বড় বড় মাহফিলে ডাকবে। আরো সুন্দর করে উপস্থাপনের জন্য সে ভাষা তৈরী করে।
ইসলামের রাজনীতি যেই ছেলেটা করে সে বলে, এজন্যই দেশে ইসলামের শাসন দরকার। ইসলামী শাসন হইলে গরীবের উপর অত্যাচার হতে না। আমরা সে জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। সেই ছেলেটা ইসলামী রাজনীতির মধ্যে আরেকটু বেশি যৌক্তিকতা খুজে পায়।
শিক্ষিত ভদ্রলোকের ছেলেরা ছবি, ভিডিও আর তথ্য সংগ্রহ করে ফেসবুক বা অনলাইন পত্রিকায় দেয়। সোস্যাল মিডিয়ার লোকজনের লাইক আর শেয়ারে অনেক ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসে।
 .
নতুন শহর-পল্লিতে আমি এরকমই দেখে আসছি।