(১) হাইস্কুলে পা রাখার পরই হয়তো ছেলেরা তার সামাজিক অবস্থান বুঝতে পারে। স্ট্রাগল করা দরিদ্র ছাত্রের মধ্যে হীনমন্যতা ও দাসত্ব ভাব জন্ম দেয়।
কর্মজীবনেও এই দাসত্বভাব তাকে টপ লেভেলে যেতে দেয় না। সে মূলতঃ টপ লেভেল আশাই করে না।
অল্প কিছু ভাল ছাত্র দারুন আশাবাদি হয়- কারন সে অনেক পড়াশুনা করেছে এবং মেধাবী। অবশ্য এই মেধাশক্তি স্বত্তেও সে জানে- সমাজের সেটেল কিডসদের স্তরে যেতে তাকে যৌবন শেষ করতে হতে পারে।
(২) যার বাবা আগে থেকেই সমাজের উচু স্তরে বসে আছে। তাকেও কম স্ট্রাগল করতে হয় না। তার বাবা মা টিচার ও কঠিন শাসনের স্কুলের বেড়াজালে আটকে দেয়। এই ছাত্র একসময় তার বাবা ও ফ্যামিলি কালচার ঠিক রাখার জন্য পড়ালেখা করে।
তার হাতে তার বাবা মা অনেকগুলা অপশন দেয়। (যেমন-সাইন্স ভাল না লাগলে ভার্সিটিতে কমার্স সাবজেক্ট নে তারপর ব্যবসা বা কিছু কর।) এজন্য সে আত্নবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
একই লেভেলের পড়ালেখার দুইজন ছাত্র ইন্টারভিউ বোর্ডে গেলে হীনমণ্য ব্যক্তি এনট্রি বা মিডলেভেলের চাকরী পাবে, অন্য দিকে আত্নবিশ্বাসী ব্যক্তি প্রথমেই টপ লেভেলের চাকরী পাবে। ধনী ফ্যামিলির ব্যক্তি টপ লেভেলের চাকরী যদি নাও পায়- সে ব্যবসা করবে বা বিদেশে চলে গিয়ে এন্ট্রি লেভেলের চাকরী করবে।
(৩) স্ট্রাগল করে বড় হওয়া কিছু ছাত্র অবশ্য একটা সময় হীনমন্যতামুক্ত হতে পারে। কিন্তু তার মধ্যে তখনও নেগেটিভিটি থাকে। সে জিএম হিসেবে জয়েন করেছে। প্রতিষ্ঠানের কাছে সে অনেক সুবিধাই চায় না। যেমন- সে হয়তো প্রতিষ্ঠানের কাছে গাড়ী চায় নাই। অথচ আগের জিএমকে কোম্পানী গাড়ী সুবিধা দিয়েছিল। ওহ, আগে জিএম এর নিজেও দামী গাড়ী ছিল। কিন্তু তার তো গাড়ী নাই তাই এই সুবিধা চায়ও নাই।
আবার তার যে লো ক্লাস লাইফ স্টাইল, গরীব- তা জানলেও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তার বেতন কম বাড়াবে।
কম বেতন নিয়েও সে হুট করে চাকরী ছাড়ার হুমকি দিবে না। কারন- সে ব্যাংক লোন নিয়ে হয়তো জমি, ফ্লাট বা গাড়ী কিনেছে। অথচ, যা আগে থেকেই সম্পদ আছে সে এই রিস্ক নেয়। জব থেকে সোজা রিজাইন করে- এভাবে বেতন দারুন বৃদ্ধি করে ফেলে।
এত কথার সারাংশ কি? হীনমণ্যতা থেকে আমাদের দরিদ্র সন্তানদের কিভাবে মুক্তি দিবো?- এই দেশে বৈসম্যের সামাজিক পরিবেশে সম্ভব কিনা জানি না। তবে, সন্তানদের পুরা বিষয়টা খুলে বলা যায়। নিজেকে ছোট মনে করে কিভাবে সে নিজের ক্ষতি করে যাচ্ছে- কিভাবে ধনীরা নিজের দাম বৃদ্ধির সুযোগ হাতছাড়া করে না। তাহলে তারা হয়তো সচেতন হতে পারে।
হীনমন্যতার আউটকাম নেগিটিভিটি
হীনমণ্যতার বড় আউটকাম হলো- নেগিটিভিটি, সত্রুভাবাপন্নতা, অহংকার ও আরো অনেক কিছু।
ছোট পদ থেকে বড় পদে এসেছে এমন ম্যানেজার, জীএম বা ডিরেক্টরদের দিকে তাকান। তাদের কেউ কেউ দেখবেন ছোট পদের লোকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করে কথা বলে। নিচের পদের কারো সাথে বেশিক্ষণ কথা বলা বা হাসাহাসি করে না। দুর দুর করে।
আমি কিছু প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম সেখানে দেশি ও বিদেশীরা একসাথে চাকরী করে। একই পদের বিদেশীরা পিয়ন, ড্রাইভার বা অন্য ছোট পদের লোকের সাথে আড্ডার মতো কথা বললেও দেশী স্যাররা বেশি কথা বাড়ায় না।
খরব নিয়ে দেখেন মানুষকে তুচ্ছ করা এই লোকরা ছোট বেলায় এমন তুচ্ছ তাচ্ছিল্লের মধ্যে বড় হয়েছিলেন। তাদেরও দুর দুর করা হতো।
সত্রুভাবাপন্ন পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে তারা বিভিন্ন সেকশনে নিজের কোরামের লোক নিয়োগ করার চেষ্টা করে। সে মনে করে, তার চেয়ে যোগ্য কেউ এসে তার অবস্থানে লাত্থি মাইরা দিবো।
নিজের কোন এচিভমেন্টে প্রাউড ফিল করতে পারেন। যে কোন ব্যক্তিই প্রাউড ফিল করে। কিন্তু এজন্য অহংকার ভাব আসতে পারে-নিজেকে আগে যে ছোট ভাবছিলো এজন্যই।
ছাত্র অবস্থায়ই নিজের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব এই বোধটা ঢুকিয়ে দেওয়া জরুরী। বাবা মা ও ক্লাসরুমের বুলিং থেকে তাকে মুক্তি দিতে হবে। প্রতিটা মানুষ আলাদা আলাদা পারপাস সার্ভ করার জনৈ তৈরী এবং প্রত্যেকে আলাদাভাবে নিজের জায়গায় সেরা।
দরিদ্র বা ছোট পদের মানুষের সাথে মিশলেই কেউ ছোট হয়ে যায় না। ভারি জিনিস বহন করলেই মানুষ ছোটলোক ভাবতে পারে- এমনটা নয়। প্রতিটা মানুষ অন্যের জন্যই বেশি কাজ করে- করতে হয়। এই সব সমন্বিত জ্ঞান ছোট বেলা থেকে একজন ছাত্রকে আত্ন বিশ্বাসী করতে পারে। দুর্বল ছাত্র পড়া লেখায় একটু খারাপ হলেও তার অন্যান্য গুণে সে আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠুক।
ছবি সোর্স পিক্সাবে